ইতালিতে আইভিএফ মামলায় জয়, সমকামী মায়েদের আইনি স্বীকৃতি!

ইতালির সর্বোচ্চ আদালত সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে ঘোষণা করেছে যে, যেসব নারী সমকামী দম্পতিরা দেশের বাইরে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তাদের দু’জনকেই এখন থেকে ইতালিতে সন্তানের বৈধ অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার দেশটির সাংবিধানিক আদালত এই ঐতিহাসিক রায়টি প্রদান করে।

আদালতের এই সিদ্ধান্তটি মূলত এমন একটি আইনের অংশবিশেষ বাতিল করেছে যেখানে বলা হয়েছিল, আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জৈবিক মা’কেই অভিভাবক হিসেবে গণ্য করা হবে। এর ফলে, কোনো নারী যদি আইভিএফ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন, তবে তার সঙ্গিনীকে এতদিন সন্তানের মা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সমস্যা হতো। এই রায়ের ফলে সেই জটিলতা দূর হলো।

আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেছে যে, কোনো সন্তানের উভয় অভিভাবকের কাছ থেকে সমানভাবে আদর, যত্ন ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাই, কোনো একজন মাকে অভিভাবকত্বের স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করা হলে তা হবে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।

এই রায়টি ইতালির এলজিবিটি কমিউনিটির কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন। দেশটির বর্তমান রক্ষণশীল সরকার, যারা এলজিবিটি অধিকারের বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে, তাদের সঙ্গে এই কমিউনিটির বিরোধ লেগেই ছিল। এই রায়ের ফলে, সেই বিতর্কের অবসান হবে এবং অনেক “রেনবো পরিবার” – যারা এই রায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন – তারা এখন কিছুটা স্বস্তি পাবেন।

আদালতের এই রায়ের ফলে যদিও ইতালিতে আইভিএফ পদ্ধতির ওপর বিদ্যমান বিধি-নিষেধের কোনো পরিবর্তন হয়নি, তবে এটি এলজিবিটি প্যারেন্টিং অধিকারের স্বীকৃতিস্বরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে, ইতালিতে শুধুমাত্র ভিন্ন লিঙ্গের দম্পতিরাই এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার সুযোগ পান। তবে, আদালত এ বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী এই বিধিনিষেধ পরিবর্তন করা যেতে পারে।

এই মামলার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল লুকা শহরের একটি আদালতের মাধ্যমে। সেখানকার বিচারকরা একই লিঙ্গের নারী যুগলের ক্ষেত্রে “পূর্ণ দ্বৈত অভিভাবকত্ব” দিতে অস্বীকার করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিভিন্ন আদালতের ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে সৃষ্টি হওয়া জটিলতা নিরসনে এই রায় সহায়ক হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *