ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের তিক্ত বৈঠক: শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের ‘গণহত্যা’র অভিযোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মধ্যে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বৈঠকে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের ওপর ‘গণহত্যা’র অভিযোগ তোলেন, যা পরে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হয়েছে।
বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে মূলত বাণিজ্য চুক্তি, ভূমি সংস্কার এবং খনিজ সম্পদ আহরণ নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি নীতি এবং শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। রামাফোসা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁর দেশে অপরাধের শিকার হওয়াদের অধিকাংশই কৃষ্ণাঙ্গ।
বৈঠকের শুরুতে ট্রাম্প রামাফোসার প্রতি কিছুটা সম্মান দেখালেও দ্রুতই তাঁর সুর পরিবর্তন করেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ তোলেন এবং এর স্বপক্ষে কিছু ভিডিও এবং সংবাদ ক্লিপ দেখান।
আলোচনায় ট্রাম্প অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর হামলা হচ্ছে এবং তাঁদের হত্যা করা হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় রামাফোসা জানান, তাঁর সরকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের উপর গণহত্যার কোনো প্রমাণ নেই।
বৈঠকে বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও কথা হয়। রামাফোসা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী ছিলেন এবং তাঁর দেশের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের বিষয়টি উল্লেখ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনা, প্ল্যাটিনাম, ক্রোমিয়াম আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ আকরিক, জিরকোনিয়াম, ভ্যানাডিয়াম এবং টাইটানিয়াম। এই খনিজগুলো আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য।
আফ্রিকার দেশগুলোতে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি প্রায়ই সমালোচিত হয়েছে। এর আগে, ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য এবং পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য নীতি বা ‘অ্যাপার্টহাইড’-এর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। একসময় শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের হাতে দেশটির ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। ১৯৯০-এর দশকে এই নীতির অবসান হলেও, এখনো দেশটির ভূমি এবং সম্পদের সিংহভাগ শ্বেতাঙ্গদের হাতে।
বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনাও উঠে আসে। এর আগে, জেলেনস্কির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছিলেন ট্রাম্প।
এই বৈঠকের ফলস্বরূপ, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা