মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ব্যবস্থা থেকে ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হচ্ছে এক সেন্টের কয়েন, যা ‘পেনি’ নামে পরিচিত। দেশটির ট্রেজারি বিভাগ সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
খবরটি মূলত প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে জানা যায়, একটি পেনি তৈরি করতে যে খরচ হয়, তার চেয়ে অনেক কম এর বিনিময় মূল্য।
এই কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের মুখপাত্র জানিয়েছেন, চলতি মাসেই শেষবারের মতো পেনি তৈরির জন্য ধাতব পাত (blanks) তৈরির অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে যে পরিমাণ পেনি মজুত আছে, সেগুলো দিয়েই কাজ চালানো হবে। এরপর ধীরে ধীরে এর উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বাজারে নতুন পেনি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে, ব্যবসায়ীরা নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশে কিছু পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সম্ভবত তারা পাঁচ সেন্টের কাছাকাছি অঙ্কগুলোকে রাউন্ড আপ অথবা রাউন্ড ডাউন করতে পারেন। এই সিদ্ধান্ত নতুন কিছু নয়।
এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও পেনি তৈরির খরচ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে পেনি তৈরি করছে, যেখানে এর উৎপাদন খরচ কয়েনের মূল্যের চেয়ে বেশি। এটা অত্যন্ত অপচয়!” তিনি ট্রেজারি সেক্রেটারিকে নতুন পেনি তৈরি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কারণ ছিল, একটি পেনি তৈরি করতে প্রায় তিন সেন্টের বেশি খরচ হয়। তবে শুধু পেনি নয়, পাঁচ সেন্টের কয়েন বা ‘নিকল’-এর উৎপাদনও লোকসানের কারণ।
প্রতিটি নিকল তৈরি করতে ১৩.৮ সেন্ট খরচ হয়, যেখানে এর উৎপাদন খরচ ১১ সেন্ট এবং প্রশাসনিক ও বিতরণ খরচ ২.৮ সেন্ট। এর ফলে সরকারের অর্থ সাশ্রয়ের পরিকল্পনা আরো কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
পেনি বাতিল করার ধারণা নতুন নয়। অনেক বছর ধরেই এই বিষয়ে আলোচনা চলছে।
শুধু তাই নয়, এর আগে কানাডার মতো দেশগুলোও তাদের সর্বনিম্ন মূল্যের মুদ্রা বাতিল করেছে। ২০১২ সালে তারা পেনি তৈরি বন্ধ করে এবং ২০১৩ সাল থেকে এর ব্যবহারও বন্ধ করে দেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে পেনি তৈরি করা হয়, কিন্তু এর একটি বড় অংশ বাজারে থাকে না।
অনেকেই এগুলোকে বাড়িতে জমিয়ে রাখেন বা ফেলে দেন। অনেক দোকানে ক্যাশ কাউন্টারে রাখা কয়েন রাখার পাত্রে গ্রাহকরা তাদের ভাঙতি হিসেবে পাওয়া পেনিগুলো রেখে যান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন কোনো মুদ্রার ব্যবহার কমে যায়, তখন সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেগরি ম্যাঙ্কিউ বলেন, “যখন মানুষ একটি ছোট মূল্যের মুদ্রা ক্যাশ রেজিস্টারে রেখে যায়, তখন বুঝতে হবে সেই মুদ্রার ব্যবহার উপযোগিতা হারাচ্ছে।”
ট্রেজারি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পেনি উৎপাদন বন্ধ করার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ৫৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
তবে নিকলের উৎপাদন বাড়লে এই সাশ্রয় নাও থাকতে পারে। যদি মিন্ট (টাকশাল) বছরে ১৪ লাখের বেশি নতুন নিকল তৈরি করতে শুরু করে, তাহলে পেনি বন্ধ করার ফলে যে সাশ্রয় হবে, তার চেয়ে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি খরচ হতে পারে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। আমাদের দেশেও কি এমন কোনো মুদ্রা বা নোট রয়েছে, যা ব্যবহারের অনুপযোগিতার কারণে বাতিল করার কথা ভাবা যেতে পারে?
এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ, মুদ্রাব্যবস্থার আধুনিকীকরণে প্রায়ই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তথ্য সূত্র: সিএনএন