জাপানে চালের সংকট: কেন বাড়ছে দাম, কিভাবে সামাল দেবে সরকার?
জাপানের খাদ্য নিরাপত্তা বর্তমানে এক গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। দেশটির বাজারে চালের অভাব দেখা দিয়েছে, যার ফলস্বরূপ বাড়ছে খাদ্যশস্যটির দাম।
চাল, জাপানি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেখানকার মানুষের প্রধান খাদ্য। কিন্তু গত গ্রীষ্মকাল থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে।
বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। এই পরিস্থিতিতে দেশটির খাদ্য মন্ত্রণালয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে।
জাপানে চালের এই সংকট হঠাৎ করে দেখা দেয়নি। এর পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ।
দীর্ঘদিন ধরে সরকার কৃষকদের ধান চাষের জমি কমাতে উৎসাহিত করে আসছে, যাতে চালের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়। এছাড়াও, গত বছর আবহাওয়ার প্রতিকূলতা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবের কারণে ফলন ভালো হয়নি।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক জাপানি রুটি ও নুডলসের বদলে ভাত খাওয়া শুরু করেছে, যা চাহিদাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
পর্যটন বৃদ্ধি এবং বাইরে খাওয়ার প্রবণতা বাড়ার কারণেও চালের চাহিদা বেড়েছে।
সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় চালের রিজার্ভ থেকে সরবরাহ শুরু করেছে। কিন্তু সেই চাল দ্রুত বাজারে পৌঁছাচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমনকি, খাদ্যমন্ত্রী তাকু ইতোকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, কারণ তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন যা সাধারণ মানুষের কাছে ছিল একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেছিলেন, “আমার তো চাল কেনার প্রয়োজন হয় না, কারণ আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে উপহার হিসেবে চাল দেয়।” এই মন্তব্যের জেরে প্রধানমন্ত্রী শিনজো ইশিবাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।
নতুন খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শিনজিরো কোইজুমি।
এই সংকট মোকাবিলায় সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছেন।
তবে, এই মুহূর্তে তারা বুঝতে পারছেন না কেন দাম কমানো যাচ্ছে না। সরকার সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানালেও, কিভাবে সংকট মোকাবেলা করা হবে, সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
এদিকে, বাজারে চালের সংকট মোকাবিলায় ব্যবসায়ীরাও ভিন্ন পথে হাঁটছেন। অনেক দোকানে গ্রাহকদের জন্য চাল কেনার পরিমাণ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।
কিছু সুপারমার্কেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা “ক্যালরোজ” জাতের চাল বিক্রি শুরু করেছে। এই চাল সাধারণত জাপানি ভোক্তাদের মধ্যে খুব একটা জনপ্রিয় নয়, তবে সংকট মোকাবিলায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের খাদ্য নীতিতে কিছু “কাঠামোগত সমস্যা” রয়েছে, যার সমাধান করা জরুরি। এছাড়াও, তারা মনে করেন, রিজার্ভ থেকে চাল ছাড়তে বিলম্ব করা হয়েছে।
দেশটির কৃষি খাতের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। জাপানি কৃষকদের গড় বয়স ৬৯ বছর, এবং গত দুই দশকে কৃষক জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সব মিলিয়ে, জাপানের চাল সংকট একটি জটিল সমস্যা, যা দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। সরকার, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ—সকলেই এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস