আর্জেন্টিনায় এক নতুন প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে মানুষেরা সন্তান নেওয়ার পরিবর্তে তাদের পোষা কুকুরদের পরিবারের অংশ হিসেবে গণ্য করছেন। দেশটির অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে এমনটা ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজধানী বুয়েনস আইরেসে এখন শিশুদের তুলনায় কুকুরের সংখ্যা বেশি। বুয়েনস আইরেসের প্রায় ৮০ শতাংশ বাড়িতে এখন পোষা প্রাণী রয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, এই সংখ্যাটি যুক্তরাষ্ট্রের গড় শহরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। আর্জেন্টিনার মানুষজন তাদের কুকুরদের খুবই ভালোবাসেন এবং তাদের দেখাশোনার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করতেও প্রস্তুত।
তারা তাদের “পেররিহো” বা “কুকুর-সন্তান” হিসাবে দেখেন। আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেক পরিবারে শিশুদের লালন-পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশটির মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ বেকারত্বের হার মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। এর ফলস্বরূপ, কুকুর এখন অনেক পরিবারের কাছে এক মূল্যবান সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
মনোবিদরা বলছেন, মানুষজন এখন তাদের পোষা প্রাণীদের সঙ্গে পরিবারের মতো সম্পর্ক তৈরি করছে।
কুকুরদের প্রতি এই ভালোবাসার কারণে বুয়েনস আইরেসে কুকুরের জন্য বিশেষ পরিষেবা বাড়ছে। সেখানে কুকুরের কেক তৈরি থেকে শুরু করে বিউটি পার্লার, এমনকি তাদের জন্য সমাধিস্থলও তৈরি হয়েছে।
“গুয়াও এক্সপেরিয়েন্স” নামক একটি বিউটি পার্লারে কুকুরের জন্য ওয়াশ, ক্লিনিং, এবং অন্যান্য সেবার জন্য প্রায় ১২০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩,০০০ টাকার বেশি) পর্যন্ত খরচ হয়, যা একজন সাধারণ আর্জেন্টাইন নাগরিকের মাসিক আয়ের এক-চতুর্থাংশ।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জ্যাভিয়ার মিলিওও পশুপ্রেমী। তিনি তার চারটি কুকুরকে “চার পায়ের সন্তান” হিসাবে উল্লেখ করেন।
এই ঘটনা আর্জেন্টিনার মানুষের মধ্যে কুকুর ভালোবাসার বিষয়টি আরও বেশি করে তুলে ধরেছে। বুয়েনস আইরেসের আইনপ্রণেতারাও পোষা প্রাণী-বান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন, যার মধ্যে গণপরিবহনে পোষা প্রাণীর প্রবেশ সহজ করার মতো বিষয়ও রয়েছে।
তবে অনেকে মনে করেন, শিশুদের তুলনায় কুকুরের প্রতি মানুষের মনোযোগ দেওয়াটা উদ্বেগের বিষয়। তাদের মতে, কম সংখ্যক শিশু থাকলে একটি সমাজের ভবিষ্যৎ কঠিন হয়ে যায়।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে আর্জেন্টিনার মানুষের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে, তারই প্রতিফলন ঘটছে তাদের পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে। বর্তমানে অনেক দম্পতি সন্তান না নিয়ে তাদের পোষ্যদের সঙ্গেই জীবন কাটাচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস