ফ্লোরিডার ডলফিনদের জগতে ভাষার সন্ধান! বিজ্ঞানীরা বলছেন…

ডলফিনদের জগতে কি ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে? ফ্লোরিডার একদল ডলফিনের আচরণ বিশ্লেষণ করে এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের নতুন গবেষণা ডলফিনদের যোগাযোগের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ফ্লোরিডার সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারী বোতলনোজ ডলফিনরা (Bottlenose dolphins) তাদের নিজস্ব শব্দভাণ্ডারের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের ব্যবহৃত কিছু শব্দ মানুষের ভাষার মতোই নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে।

যেমন, তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগের জন্য ‘স্বাক্ষরসূচক হুইসেল’ (signature whistles) ব্যবহার করে, যা অনেকটা মানুষের নামের মতো। এছাড়াও তারা কিছু বিশেষ ‘অ-স্বাক্ষরসূচক হুইসেল’ (non-signature whistles) ব্যবহার করে, যা হয়তো কোনো বার্তা বা সংকেত বোঝায়।

উডস হোল ওশেনোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশন এবং হ্যাম্পশায়ার কলেজের সমুদ্র জীববিজ্ঞানী লায়েলা সাইঘের নেতৃত্বে একদল গবেষক ফ্লোরিডার উপকূলের কাছে বসবাসকারী প্রায় ১৭০টি ডলফিনের আচরণ দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ডলফিনরা অন্তত ২২ ধরনের ‘অ-স্বাক্ষরসূচক হুইসেল’ ব্যবহার করে।

এই শব্দগুলোর মধ্যে কিছু হয়তো বিপদ সংকেত হিসেবে কাজ করে, আবার কিছু জিজ্ঞাসাসূচক হতে পারে। সাইঘের মতে, এই হুইসেলগুলো হয়তো এক ধরনের শব্দ বা “শব্দ-সদৃশ” যা নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে।

NSWA এবং NSWB নামের দুটি বিশেষ হুইসেল এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। NSWA সম্ভবত বিপদ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আর NSWB-এর মাধ্যমে ডলফিনরা যেন প্রশ্ন করে!

গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে সারাসোটা ডলফিন গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা ডলফিনদের শব্দ রেকর্ড করছেন। জলের নিচে শব্দ ধারণের জন্য তারা হাইড্রোফোন (hydrophones) ব্যবহার করেন।

এছাড়াও, ডিজিটাল অ্যাকুয়াস্টিক ট্যাগ ব্যবহার করে তারা ডলফিনদের চলাফেরা এবং শব্দ একসঙ্গে রেকর্ড করেছেন। এই বিশাল তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করেই বিজ্ঞানীরা ডলফিনদের যোগাযোগের নতুন রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন।

গবেষকরা বলছেন, ডলফিনরা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিখে চলে। তাদের নিজস্ব নাম আছে এবং তারা তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে বিশেষ সুরে কথা বলে।

মানুষের মতো, তারাও কি তাহলে ভাষার মতো কোনো জটিল পদ্ধতিতে যোগাযোগ স্থাপন করে? বিজ্ঞানীরা এখনো সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। তবে, ডলফিনদের এই নতুন আচরণ তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং যোগাযোগের জটিলতা সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।

ভবিষ্যতে, হয়তো আমরা জানতে পারব, ডলফিনদের নিজস্ব ভাষা আছে কিনা।

তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডলফিনদের ভাষা আছে কিনা, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ, ভাষা হতে গেলে শব্দগুলোর সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকতে হয় এবং তা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ব্যবহার করতে হয়।

এখনো পর্যন্ত, বিজ্ঞানীরা ডলফিনদের কিছু শব্দের অর্থ খুঁজে বের করতে পেরেছেন, কিন্তু তাদের ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *