পাখির পেটে প্লাস্টিক! স্পর্শ করলেই শব্দ, ভয়ঙ্কর দৃশ্য!

সমুদ্রের বুকে এক ভয়ংকর বিপদ! অস্ট্রেলিয়ার লর্ড হাও দ্বীপের পাখিদের পেটে জমছে প্লাস্টিক, যা তাদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।

লর্ড হাও দ্বীপ, যা অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, সেখানে বাস করে কয়েক হাজার সামুদ্রিক পাখি, যাদের মধ্যে শিয়ারওয়াটার অন্যতম। গাঢ় বাদামী রঙের এই পাখিগুলো দূর থেকে দেখতে খুবই সুন্দর, কিন্তু তাদের জীবন এখন এক গভীর সংকটে।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই দ্বীপের শিয়ারওয়াটার পাখিদের পেটে মারাত্মক পরিমাণে প্লাস্টিক জমছে। তাদের শরীর এতটাই প্লাস্টিকে ভরে গেছে যে, বিজ্ঞানীরা পাখিগুলোকে ধরলে তাদের পেটে প্লাস্টিকের কচকচ শব্দ শুনতে পান।

অ্যাড্রিফট ল্যাব নামক একটি গবেষণা দলের বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই দশক ধরে এই দ্বীপের পাখিদের উপর গবেষণা করছেন। তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, প্রতি বছরই পাখির পেটে প্লাস্টিকের পরিমাণ বাড়ছে, তবে এবারকার চিত্র ছিল ভয়াবহ।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পাখির বাচ্চার পেটে ৭৭৮ টুকরোর বেশি প্লাস্টিক পাওয়া গেছে! যা আগেকার সব রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। এর আগে, একটি পাখির বাচ্চার পেটে সর্বোচ্চ ৪০৩ টুকরোর বেশি প্লাস্টিক পাওয়া যায়নি।

গবেষকরা বলছেন, পাখির বাচ্চাদের এই প্লাস্টিক খাওয়ার মূল কারণ হলো, তাদের বাবা-মায়েরা খাবারের বদলে ভুল করে প্লাস্টিক খাইয়ে দিচ্ছে। প্লাস্টিকের উপর জমে থাকা শৈবাল পাখির কাছে খাদ্যের মতো মনে হতে পারে, ফলে তারা সহজেই আকৃষ্ট হয়।

এছাড়াও, পাখিরা এমন কিছু জিনিসও খেয়ে ফেলে যা প্লাস্টিক খেয়েছিল।

প্লাস্টিক পাখির শরীরে জমা হওয়ার পর এক ধরনের ‘ইটের’ মতো আকার ধারণ করে। এর ফলে তাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হয়। অনেক সময় তাদের খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে যায়, আবার কখনো তারা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মারা যায়।

বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন, প্লাস্টিকের কারণে পাখির কিডনি এবং হৃদপিণ্ডে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি, তাদের মস্তিষ্কেরও ক্ষতি হতে পারে।

সমুদ্রপাখিরা পরিবেশের পরিবর্তন সম্পর্কে সংকেত দেয়। তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পান। উদ্বেগের বিষয় হলো, গত ৫০ বছরে সমুদ্র পাখির সংখ্যা ৭০ শতাংশ কমে গেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন, মাছ ধরার জাল এবং অন্যান্য কারণে তারা এমনিতেই হুমকির মুখে, তার উপর প্লাস্টিক দূষণ তাদের জন্য এক নতুন বিপদ ডেকে এনেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পাখির পেটে পাওয়া যাওয়া প্লাস্টিকের মধ্যে বোতলের ক্যাপ, টাইলসের টুকরা, এবং প্লাস্টিকের চামচ-এর মতো জিনিসও ছিল। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই দূষণ শুধু লর্ড হাও দ্বীপের পাখিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

সারা বিশ্বের সমুদ্রেই প্লাস্টিকের দূষণ বাড়ছে, যা আমাদের পরিবেশের জন্য এক বিরাট হুমকি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি পাউন্ড প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে জমা হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা একটা সংকট এবং দ্রুতই এই সংকট বাড়ছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, প্লাস্টিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, যা আমাদের সবার জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই, আমাদের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতন হতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *