যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত, আঞ্চলিক শুল্কের দিকে ঝুঁকছে ট্রাম্প প্রশাসন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশগুলির সঙ্গে পৃথকভাবে বাণিজ্য চুক্তি করার পরিবর্তে, তারা এখন আঞ্চলিক শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছে।
এই পদক্ষেপের ফলে চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছাকাছি অবস্থিত দেশগুলির উপর শুল্কের বোঝা বাড়তে পারে।
শুরুতে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে “পাল্টা শুল্ক” (reciprocal tariffs) আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে রাজি না হয়। কিন্তু এই ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশিত ফল দিতে ব্যর্থ হয়।
এর ফলস্বরূপ, বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং অনেক দেশ প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে পৃথক চুক্তি করার পরিকল্পনা সফল না হওয়ায় তারা এখন আঞ্চলিক ভিত্তিতে শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন, মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর জন্য এক ধরনের এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলের জন্য অন্য ধরনের শুল্ক নির্ধারণ করা হতে পারে।
যদি এমনটা হয়, তাহলে চীনের কাছাকাছি অবস্থিত দেশগুলির, যাদের শুল্ক হার তুলনামূলকভাবে কম, তাদের উপর বেশি শুল্কের বোঝা চাপতে পারে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – ডব্লিউটিও)-এর নিয়ম লঙ্ঘিত হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে। ডব্লিউটিও-এর “মোস্ট-ফেভারড নেশন” (Most-Favored Nation) নীতির অধীনে, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আমদানি শুল্কের হার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
আঞ্চলিক শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্তের পেছনে একটি কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিটি দেশের সঙ্গে আলাদাভাবে শুল্কের হার নির্ধারণ করা বেশ কঠিন।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র পণ্য অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণের জন্য জটিল একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেখানে প্রায় ১৭,০০০ এর বেশি শুল্ক কোড রয়েছে।
তাই, প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা শুল্কের হার নির্ধারণ করা হলে তা অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি এই জটিলতা কমাতে পারে। এই ধরনের চুক্তি দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক হার কমানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে, এর কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। আঞ্চলিকভাবে শুল্ক আরোপ করলে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ পেতে পারে, যা তাদের জন্য সুবিধা বয়ে আনতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন বাণিজ্য নীতির প্রভাব বাংলাদেশের উপরও পড়তে পারে।
কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানি খাতে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।
তাই, এই বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির গতিবিধির দিকে নজর রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন