ফেরত পাঠানো আফগানদের করুন অবস্থা! দেশে ফিরেই বিপর্যয়

আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয় গভীর হচ্ছে, কারণ প্রতিবেশী দেশগুলো হাজার হাজার আফগানকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। এপ্রিল মাসেই পাকিস্তান ও ইরান থেকে দুই লক্ষ আশি হাজারের বেশি আফগানকে হয় বিতাড়িত করা হয়েছে, অথবা তাদের ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

এদের মধ্যে অনেকেই নিঃস্ব অবস্থায় ফিরে এসেছেন, যাদের জীবন পুনর্গঠনের জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। তাদের এই সংকটময় পরিস্থিতি তাদের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে শ্রমিক হিসেবে সারা জীবন কাটানো ৪৫ বছর বয়সী এজাতুল্লাহ সম্প্রতি তার স্ত্রী ও সাত সন্তানকে নিয়ে তোরখাম সীমান্ত দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন। তিনি জানান, “আমাদের দ্রুত চলে যেতে বলা হয়েছিল।

আমাদের সব জিনিসপত্র সেখানেই রয়ে গেছে, আমরা এখন একেবারে নিঃস্ব।” এমন একটি দেশে যেখানে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য চরম আকার ধারণ করেছে, সেখানে পরিবারকে বাঁচানোর কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তিনি।

বর্তমানে দেশটির অর্ধেক মানুষই জীবনধারণের জন্য মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল।

পাকিস্তান ও ইরান দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের প্রায় ৫২ লক্ষ আফগান শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীর আশ্রয়দাতা ছিল। কিন্তু দেশ দুটির অর্থনৈতিক মন্দা আফগান সম্প্রদায়ের প্রতি ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছে।

এর ফলস্বরূপ, আফগানদের বিতাড়ন করা হচ্ছে।

আফগানিস্তানে ফিরে আসা শরণার্থীরা তাদের নিরাপত্তা ও অধিকারের ক্ষেত্রে গুরুতর ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, কারণ তাদের কাজের সুযোগ, শিক্ষা ও অবাধ চলাফেরার উপর ক্রমশ বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।

এছাড়াও, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদেরও দেশে ফিরলে ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

আফগানিস্তানে মানবিক চাহিদা তীব্র, বেকারত্ব বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় এই পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) এই সংকট মোকাবিলায় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উদ্বাস্তুদের জরুরি সহায়তা প্রদানের জন্য সংস্থাটির প্রায় ৬ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

এই সহায়তার মধ্যে রয়েছে নগদ অর্থ, খাদ্য, অস্থায়ী আশ্রয় এবং নারীপ্রধান পরিবার, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য বিশেষ পরিষেবা। এছাড়াও, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার শিকারদের জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের আফগানিস্তানের প্রতিনিধি আরাফাত জামাল বলেছেন, “লক্ষ লক্ষ আফগানের জীবন এক সুতোয় বাঁধা। আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৃহত্তর সমর্থন এই সংকট মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *