মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুদানে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (গতকাল) দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে সুদানে চলমান সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস-এর (আরএসএফ) মধ্যেকার সংঘাতে, সুদানের সরকার রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার করেছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই অভিযোগের পরেই যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সুদানের বিরুদ্ধে নেওয়া এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি এবং সরকারি ঋণ সীমাবদ্ধ করা হবে।
আগামী ৬ই জুনের দিকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে, যা কংগ্রেসকে অবহিত করার পরেই চূড়ান্ত করা হবে।
ব্রুস আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সুদানের সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করতে এবং রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ক কনভেনশন (সিডব্লিউসি)-এর অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতাগুলো মেনে চলতে আহ্বান জানাচ্ছে।
অন্যদিকে, সুদানের সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তাদের মুখপাত্র খালিদ আল-এইসির মতে, “এই হস্তক্ষেপের কোনো নৈতিক বা আইনি ভিত্তি নেই এবং এর মাধ্যমে ওয়াশিংটনের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়, যা সুদানে তাদের প্রভাব বিস্তারের পথ বন্ধ করে দেয়।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে সুদানে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ-এর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়, যা জাতিগত সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এর ফলস্বরূপ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছে।
এই সংঘাতে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এর আগে, জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সুদানের সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র তাকে আলোচনার পরিবর্তে যুদ্ধের পথ বেছে নেওয়ার জন্য দায়ী করে।
একইসাথে, আরএসএফ এবং তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের গণহত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের শীর্ষস্থানীয় কিছু নেতার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো, যিনি “হেমটি” নামে পরিচিত, তিনিও রয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, সুদানের সেনাবাহিনী সংঘাতে অন্তত দু’বার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এছাড়া, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুই কর্মকর্তার মতে, সম্ভবত ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল, যা মানবদেহের টিস্যুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা রাসায়নিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
সুদানের একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, “আসলে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, কংগ্রেসের কাছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি উত্থাপিত অভিযোগ থেকে মনোযোগ সরানো।
ওই সূত্র আরও জানায়, রাসায়নিক অস্ত্রের অভিযোগ তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাইলে রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ক নিষিদ্ধকরণ সংস্থা (ওপিসিডব্লিউ)-এর দ্বারস্থ হতে পারতো, কিন্তু তারা তা করেনি।
উল্লেখ্য, সুদানের সরকার সেনাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ।
তারা সম্প্রতি আমিরাতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
তাদের অভিযোগ, আমিরাত আরএসএফকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করে যুদ্ধে সহায়তা করছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটরা গত সপ্তাহে আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কারণ তাদের বিরুদ্ধেও এই যুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, সুদানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই মাসের শুরুতে পোর্ট সুদানে যে হামলা হয়েছে, তার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত দায়ী।
সুদানের অভিযোগ, আমিরাত সরাসরি এই যুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে।
তবে, আমিরাত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন