মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের এক নির্জন পাহাড়ে ১৯ বছর বয়সী যমজ দুই ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে অবশেষে মুখ খুলল তদন্তকারী সংস্থা। প্রথমে ঘটনাটিকে হত্যা-আত্মহত্যা হিসেবে ধারণা করা হলেও, ফরেনসিক রিপোর্ট ও অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে এখন জানা যাচ্ছে, তাদের মৃত্যু ছিল আত্মহত্যা।
পরিবার এখনো এই ঘটনায় শোকাহত এবং তারা ঘটনার কারণ জানতে চাইছে।
জানা যায়, কোয়াদির ও নাজির লুইস নামের ওই দুই যমজ ভাই দেখতে ছিলেন একদম একরকম। তাদের পরিবার ও বন্ধুদের কাছে তারা ‘ডিং-ডং’ নামে পরিচিত ছিলেন।
কারণ, তারা সবসময় একসঙ্গে থাকতেন। তাদের প্রিয় ছিল অ্যানিমে ও ‘প্রিন্সেস অ্যান্ড দ্য ফ্রগ’ নামের একটি কার্টুন। মার্চ মাসের ৮ তারিখে আটলান্টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরের একটি পাহাড়ের চূড়ায় তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
তদন্তকারীরা প্রথমে ধারণা করেছিলেন, এটি সম্ভবত খুন ও আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এই ধারণা মানতে রাজি ছিলেন না।
তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, দুই ভাইয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল, তারা একে অপরের ক্ষতি করতে পারতেন না।
তবে, সম্প্রতি জর্জিয়া ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (জিবিআই) autopsies সহ অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করে জানায়, এই ঘটনা আত্মহত্যা। তাদের কাছ থেকে পাওয়া বন্দুকের প্রমাণ এবং মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট ইতিহাসে আত্মহত্যার বিষয়গুলো খুঁজে পাওয়া গেছে।
ঘটনার আগে তারা কীভাবে একটি বন্দুক লোড করতে হয়, সেই সম্পর্কেও ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করেছিলেন। জিবিআই এই বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ঘটনার কয়েক দিন আগে, নাজিরের বোস্টনে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বিমানে ওঠেননি।
এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ঘটনার আগের দিন, ৭ই মার্চ, রাতে তারা একটি গ্যাস স্টেশনে জল, চিপস এবং গরুর মাংসের শুকনো খাবার কিনেছিলেন, যার দাম ছিল ১০.২৪ মার্কিন ডলার (বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,১২০ টাকা)।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, এই দুই ভাইয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল অনেক বড়। তারা তাদের নিজেদের একটি পোশাকের ব্যবসা শুরু করতে চেয়েছিল এবং তাদের ২০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একটি সমুদ্র ভ্রমণে যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এখনও তাদের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
যমজ দুই ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাদের বোন কাইরি বলেন, “তারা সবসময় আমার সাথে এসে তাদের সারাদিনের কথা বলত। তারা আমার ভালো-মন্দ সবসময় দেখত।”
পরিবারের সদস্যরা জানান, কোয়াদির ও নাজির দুজনেই খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল। কোয়াদির উড়োজাহাজ মেরামতের কাজ করতে চাইত, আর নাজিরের স্বপ্ন ছিল গাড়ি সারানোর।
তাদের এক আত্মীয়া বলেন, “তাদের লক্ষ্য ছিল উদ্যোক্তা হওয়া, কারো অধীনে কাজ করা নয়।”
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তের জন্য তারা একটি তহবিল গঠন করেছেন এবং তারা এখনও তাদের প্রিয়জনদের মৃত্যুর কারণ জানতে চান।
তথ্যসূত্র: সিএনএন