গাজায় ইসরায়েলের ‘ন্যূনতম’ সহায়তা, বাড়ছে মানবিক সংকট!

গাজায় মানবিক সংকট: ইসরায়েলের সীমিত ত্রাণ সরবরাহে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে।

গাজায় ত্রাণ সরবরাহ সীমিত রাখায় সেখানকার খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও ত্রাণকর্মীরা ইসরায়েলের এই নীতির তীব্র সমালোচনা করছেন।

অবরুদ্ধ গাজায় বসবাস করা প্রায় ২১ লাখ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করতে পারছে না ইসরায়েল।

গত কয়েক মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য, ঔষধ এবং জ্বালানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ৫০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন, কিন্তু ইসরায়েল সে পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করছে না।

সম্প্রতি জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ১০৭টি ত্রাণ বোঝাই ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে, সোমবার থেকে এ পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৩০০টির বেশি ট্রাক প্রবেশ করতে পেরেছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়কারী টম ফ্লেচার বলেছেন, এই ত্রাণ সরবরাহ ‘সমুদ্রে এক ফোঁটা জলের মতো’ এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও বেশি ত্রাণ পাঠানো প্রয়োজন।

ত্রাণ সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় পাঠানো সামান্য ত্রাণও সেখানকার মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। ইসরায়েলি হামলা এবং লুটপাটের কারণে ত্রাণ বিতরণে সমস্যা হচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক অফিসের (OCHA) মতে, নিরাপত্তা সংকট, লুটপাটের ঝুঁকি, সমন্বয়হীনতা এবং ইসরায়েলি বাহিনীর ভুল পথে ত্রাণ পাঠানোর কারণে মালামাল লোড এবং বিতরণেও সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে, হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ত্রাণ রক্ষা করতে যাওয়া অন্তত ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থাগুলোর একটি নেটওয়ার্কের দাবি, অবরোধ শিথিল করার পর থেকে মাত্র ১১৯টি ত্রাণ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে এবং সশস্ত্র দলগুলোর লুটপাটের কারণে ত্রাণ বিতরণ ব্যাহত হচ্ছে।

তারা আরও জানায়, ক্ষুধার্ত শিশু ও পরিবারের জন্য পাঠানো খাবারও লুট করা হয়েছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, তাদের ১৫টি ট্রাক গাজায় খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার সময় লুট হয়েছে।

গাজার হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

সেখানকার নাসের হাসপাতালের চিকিৎসক ড. আহমেদ আল-ফারাহ জানিয়েছেন, ‘অধিকাংশ মানুষ এখন তাদের মজুদ করা সামান্য খাবার খাচ্ছে। আমি মনে করি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।’

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাদ্য সংকটের কারণে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অন্তত ২৯ জন শিশু ও বৃদ্ধ মারা গেছে এবং আরও হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেছেন, জাতিসংঘের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তবে গাজায় পৌঁছানো ত্রাণের পরিমাণ ‘পর্যাপ্ত নয়’।

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ত্রাণ বিতরণে বাধা দিলে তাদের দেশগুলো ব্যবস্থা নেবে, এমনকি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি সরকারের বেসামরিক জনগণের প্রতি প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানে অস্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন এবং আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করব না।’

এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এই তিন দেশের নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ইতিহাসের ভুল দিকে’ থাকার অভিযোগ এনেছে এবং সন্ত্রাসীদের সমর্থন করার কথা বলেছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *