বিয়ের দিনেও মাইগ্রেনের আতঙ্ক! কনেদের গোপন যন্ত্রণা!

বিয়ে: আনন্দ আর উদ্বেগের এক মিশ্রণ, যখন শরীরে বাসা বাঁধে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা

বিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান, যা প্রতিটি মানুষের জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। প্রিয়জনদের উপস্থিতিতে নতুন জীবনের পথে পা বাড়াতে কে না চায়?

কিন্তু বিয়ের এই আনন্দময় পরিবেশে, কিছু মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাদের শারীরিক অসুস্থতা। মাইগ্রেনের মতো দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে যারা দিন কাটান, তাদের জন্য বিয়ের পরিকল্পনা করাটা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে আসে।

একদিকে থাকে সুন্দর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার চাপ, অন্যদিকে শরীরের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ।

আমরা এমন দুইজন নারীর কথা বলব, যারা বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আবার একই সাথে লড়ছেন মাইগ্রেনের সঙ্গে। তাদের জীবনের গল্পগুলো অনেকের কাছেই পরিচিত, কারণ স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো অনেক সময় আমাদের জীবনকে নতুন মোড় দেয়।

আন্না কনস্টানটোপোলাস নামের একজন নারী, যিনি ২০২৩ সালে বিয়ে করবেন।

১৫ বছর বয়সে তিনি “এহলার্স-ড্যানলস সিন্ড্রোম” (Ehlers-Danlos Syndrome) নামক একটি রোগে আক্রান্ত হন।

এই রোগের কারণে তার শরীরে সংযোগকারী টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেই সাথে প্রায়ই মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়।

মাইগ্রেনের ব্যথা তার কাছে কেমন? আন্না জানান, “মাথার বাঁ দিকে এমন ব্যথা হয় যেন কেউ চোখ দিয়ে পেরেক গেঁথে দিয়েছে। কোনো আলো বা শব্দ সহ্য করতে পারি না।

অন্ধকার ঘরে চুপচাপ শুয়ে থাকতে হয়।”

আরেকজন নারী, মিকায়েলা অ্যাগনোলিন, যিনি মায়ামিতে রিয়েল এস্টেট এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

তিনি গত পাঁচ বছর ধরে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন।

তার ভাষায়, “চোখের পেছনে একটা চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়, যা পরে মাথার একপাশে তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। মনে হয় যেন কেউ মাথার পাশে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে আঘাত করছে।”

মাইগ্রেনের মতো সমস্যাগুলো যাদের থাকে, তাদের শরীর সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকতে হয়।

আন্না তার শরীরের উপর প্রভাব ফেলে এমন বিষয়গুলো একটি গুগল শিটে লিখে রাখেন, যাতে তিনি বুঝতে পারেন কখন তার মাইগ্রেন হতে পারে।

কিন্তু কত প্রস্তুতি নিলেও, সবসময় তা কাজে আসে না।

মাইগ্রেন যে কোনো সময় হতে পারে, এমনকি সামান্য হলেও অনেক সময় কিছু করার মতো শক্তি থাকে না।

আন্না বলেন, “ছোটখাটো সমস্যা হলেও আমি কোনো কাজ করতে পারি না।”

একবার তার এত তীব্র মাইগ্রেন হয়েছিল যে প্রায় দুই মাস ধরে বিছানা থেকে উঠতে পারেননি।

স্কুল থেকে তাকে নাম কাটাতে হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিকায়েলার জীবনেও এমন অভিজ্ঞতা আছে।

একবার অফিসের গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিংয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।

সবার সামনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে তার খুব অস্বস্তি লেগেছিল।

এই ধরনের স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, আন্না এবং মিকায়েলা দুজনেই চান তাদের বিয়ের দিনটি সুন্দর হোক।

তারা জানেন, এর জন্য তাদের অনেক কিছু করতে হবে।

অনুষ্ঠানের স্থান নির্বাচন থেকে শুরু করে বিশ্রাম নেওয়ার সময় নির্ধারণ, এমনকি অতিথিদের সঙ্গে কিভাবে মিশতে হবে—সবকিছুই তাদের পরিকল্পনার অংশ।

বিয়ের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই তারা তাদের খাদ্য এবং জীবনযাত্রায় বিশেষ পরিবর্তন আনেন।

আন্না বিয়ের আগে তার খাদ্য তালিকায় বিশেষ নজর রাখবেন।

এছাড়াও, তিনি তার পরিচিত উপায়গুলো অনুসরণ করবেন, যেমন টক জাতীয় খাবার (যেমন: টক যুক্ত জেলি) খাওয়া অথবা বরফ ব্যবহার করা।

পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে, তিনি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

আন্না বলেন, “আসলে মাইগ্রেন এমন একটা জিনিস, যা সবসময় আমাদের হাতে থাকে না।”

এটা শুধু ইচ্ছাশক্তি দিয়ে জয় করা যায় না।

তাদের এই উপলব্ধির কারণে, তারা তাদের শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

মিকায়েলা বলেন, “যখন অসুস্থতার কারণে পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়, তখন আমি খুব অপরাধী বোধ করি।

আমি চাই, মানুষ বুঝুক যে মাইগ্রেনের কারণে জীবনে কত পরিবর্তন আসে।

মিকায়েলা আরও যোগ করেন, “অনুষ্ঠানের আলোর ব্যবস্থা কেমন হবে, বিয়ের আগে কতটুকু বিশ্রাম নিতে পারব এবং অনুষ্ঠানে কীভাবে নিজেকে সামলাব—এসব বিষয় নিয়ে আমাকে ভাবতে হচ্ছে।

বিয়ের আগের কিছু অনুষ্ঠানেও আমাকে না বলতে হয়েছে, কারণ আমি আমার শরীরের উপর বেশি চাপ দিতে চাই না।

এটা সত্যি একটা বাড়তি চাপ তৈরি করে।

সবশেষে, প্রতিটি কনে চায় তার বিয়ের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকুক।

বন্ধু এবং পরিবারের সমর্থন থাকলে, যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হয়।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *