যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে যাচ্ছে, যা দেশটির দীর্ঘদিনের যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনে সহায়ক হবে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ শুক্রবার এক সাধারণ লাইসেন্স ইস্যু করেছে। এই লাইসেন্সটি সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনের অনুমতি দেবে। এর ফলে কার্যত সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা हटানো হবে। একইসঙ্গে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ‘সিজার অ্যাক্ট’-এর অধীনে ১৮০ দিনের একটি ছাড়পত্র দিয়েছে, যা সিরিয়ায় বিনিয়োগ ও পুনর্গঠন কার্যক্রমকে আরও সহজ করবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই ছাড়পত্রের ফলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও স্যানিটেশন সরবরাহ সহজ হবে এবং সিরিয়াজুড়ে মানবিক সহায়তা আরও ভালোভাবে পৌঁছানো যাবে। রুবিও আরও বলেন, এই পদক্ষেপ ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার মধ্যে নতুন সম্পর্ক’ গড়ার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ।
সৌদি আরবে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা দ্রুতই তুলে নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তে অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন এবং মার্কিন সরকারের মধ্যে দ্রুত সিদ্ধান্তটি কার্যকর করার তোড়জোড় শুরু হয়।
পরে রুবিও জানান, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার একটি জটিল পর্যালোচনা করছে, যা সম্পন্ন হতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে। তিনি আরও বলেন, যদি পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তবে তাঁরা এই নিষেধাজ্ঞা আইনটি বাতিল করতে চাইবেন, কারণ কোনো দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে সেখানে বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন।
ট্রাম্প জানান, তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে কথা বলার পরেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সৌদি কর্মকর্তারা অনেক মাস ধরেই এই বিষয়ে আলোচনা করছিলেন এবং তাঁরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে সিরিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা আসবে।
তুরস্কও এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল এবং নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছিল। তবে, এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মিত্র দেশ ভিন্নমত পোষণ করেছে। ইসরায়েল এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে। ইসরায়েলের আশঙ্কা ছিল, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে পরিস্থিতি আবারও জটিল হতে পারে।
ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তোলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প সেই অনুরোধ রাখেননি।
ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে বলেন, ‘আমি মনে করি এটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।’
তথ্য সূত্র: সিএনএন