ঘুমের ভঙ্গি: কোন পাশে শুলে সুস্থ থাকবেন?
ঘুম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে এবং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
তবে, ঘুমের ভঙ্গি শরীরের উপর বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি গবেষণা দেখাচ্ছে যে, পাশ ফিরে ঘুমানো কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
ঘুমের এই ভঙ্গি শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, কোমর ব্যথা এবং বুক জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিৎ হয়ে ঘুমানোর পরিবর্তে পাশ ফিরে ঘুমালে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। ক্যালিফোর্নিয়ার হানটিংটন মেমোরিয়াল হাসপাতালের পালমোনারি ও স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. রাজ দাশগুপ্তের মতে, “পাশ ফিরে ঘুমানোর কিছু সুস্পষ্ট উপকারিতা রয়েছে, তবে এটি নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য বেশি কার্যকর।”
যারা ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টে ভোগেন, তাদের জন্য পাশ ফিরে ঘুমানো খুবই উপকারী। ঘুমের সময় শ্বাসকষ্ট হলে, ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার সম্ভবনা থাকে।
চিৎ হয়ে ঘুমালে, জিহ্বা আলজিহ্বার দিকে চলে যায়, যা শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে এবং শ্বাস নিতে সমস্যা সৃষ্টি করে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক রাফায়েল পেলায়ো ব্যাখ্যা করেন, “এই কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ে।”
অন্যদিকে, পাশ ফিরে ঘুমালে জিহ্বা স্বাভাবিকভাবে মুখের পাশে থাকে, যা শ্বাসনালীকে খোলা রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট কমে এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয়।
এছাড়াও, পাশ ফিরে ঘুমালে ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ে, যা গভীর শ্বাস নিতে সাহায্য করে।
কোমর ব্যথার সমস্যা সমাধানেও পাশ ফিরে ঘুমানো সহায়ক। পিঠের উপর ভর দিয়ে ঘুমানো কোমর ব্যথার জন্য ভালো নয়, কারণ এটি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতাকে ব্যাহত করে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের স্লিপ নিউরোলজির অধ্যাপক আলেকসান্ডার ভিদেনোভিকের মতে, “কোমর ব্যথার রোগীদের জন্য চিৎ হয়ে ঘুমানো উচিত নয়।” পাশ ফিরে ঘুমালে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক অবস্থান বজায় থাকে এবং কোমরের উপর চাপ কম পড়ে।
এছাড়া, পাশ ফিরে ঘুমালে শ্রোণী অঞ্চলের উপরও চাপ কম পড়ে, যা গর্ভবতী মহিলা এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের জন্য উপকারী।
বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে পাশ ফিরে ঘুমানো। চিৎ হয়ে ঘুমালে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে, যা বুক জ্বালাপোড়ার কারণ হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাম দিকে পাশ ফিরে ঘুমালে এই সমস্যা কম হয়, কারণ এই অবস্থানে খাদ্যনালী পাকস্থলীর উপরে থাকে।
পাশ ফিরে ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করা কঠিন হতে পারে, তবে এটি অসম্ভব নয়। আপনি একটি বালিশ ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনার দুই হাঁটুর মধ্যে রেখে মেরুদণ্ডকে সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করবে।
যারা ঘুমের মধ্যে চিৎ হয়ে যান, তারা একটি বালিশ ব্যবহার করতে পারেন অথবা জামাকাপড়ের পিছনে একটি টেনিস বল সেলাই করে নিতে পারেন, যাতে চিৎ হয়ে ঘুমানো কঠিন হয়।
স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করেও ঘুমের ভঙ্গি পরিবর্তনের চেষ্টা করা যেতে পারে।
ঘুমের পরিবেশ শান্ত, অন্ধকার এবং শীতল রাখা ভালো। ঘুমের সমস্যা হলে, একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক