আতঙ্ক! আইভরি কোস্টে কেন উঠলো সেনা অভ্যুত্থানের গুজব?

পশ্চিম আফ্রিকান দেশ আইভরি কোস্টে আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে গুজব ছড়িয়েছে যে সেখানে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পরে যেখানে দাবি করা হয়, দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী আবিজানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।

তবে, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী বা সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি, আবিজানের বাসিন্দারাও সামাজিক মাধ্যমে এই ধরনের ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।

আইভরি কোস্টের তথ্য নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় সংস্থা (ANSSI) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, “সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটি একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত অপপ্রচারণার ফল।”

আসন্ন নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে বিরোধী দলের জনপ্রিয় নেতা টিদজানে থিয়ামকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

থিয়াম এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন এবং এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।

আফ্রিকার কোকো উৎপাদনকারী দেশ আইভরি কোস্টে নির্বাচনের ইতিহাসে সহিংসতার এক দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। এক দশক আগের একটি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

এবারও প্রেসিডেন্ট আলাসানে ওয়াতারা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেন এমন জল্পনা-কল্পনা থেকে উত্তেজনা বাড়ছে। যদিও দেশটির সংবিধানে প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের কথা উল্লেখ আছে, তবে ২০১৬ সালের একটি সাংবিধানিক সংশোধনীর কারণে তিনি সম্ভবত আবারও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

জানা গেছে, বুধবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও দেখা যাচ্ছে যেখানে রাস্তাঘাটে বিক্ষোভ এবং দোকানপাটে আগুন ধরানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। যদিও আইভরি কোস্টের সরকারি ভাষা ফরাসি, তবে এই সম্পর্কিত বেশিরভাগ পোস্ট এবং ব্লগগুলো ইংরেজিতে লেখা ছিল এবং আবিজান থেকে ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

কিছু পোস্টে সেনাবাহিনীর প্রধানকে হত্যার এবং প্রেসিডেন্ট ওয়াতারাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও দাবি করা হয়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

তবে, প্রেসিডেন্ট ওয়াতারা বৃহস্পতিবার রাজধানী আবুজায় একটি নিয়মিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। একই সঙ্গে তিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হুফুয়েট-বোইগনির স্মরণে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দেন।

আগামী ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। অতীতে নির্বাচনের সময় সহিংসতা দেখা গেছে।

২০১০ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লরেন্ট গ্যাগবোর পরাজয় হলে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে রাজি হননি। এর ফলে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় এবং সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়।

এতে প্রায় ৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। পরে গ্যাগবোকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই সংঘাতের অবসান হয়।

অতীতে ঘটে যাওয়া এমন সহিংসতা আবারও ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, গ্যাগবোসহ বিরোধী দলের অনেক প্রার্থীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।

ওয়াতারা চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন কিনা, তা নিয়ে এখনো কোনো স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি তার প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, প্রতিবেশী দেশ মালির তরুণ সামরিক নেতারা ক্ষমতা দখলের পর ফ্রান্সের প্রতি যে hostile মনোভাব দেখিয়েছেন, সেই কারণে তাঁদের প্রতি জনগণের সহানুভূতি বাড়ছে।

অন্যদিকে, ওয়াতারা গত দেড় দশকে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এনে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। তিনি রাজনৈতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রেখেছেন।

তবে সমালোচকরা বলছেন, ওয়াতারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছেন। বিশেষ করে, বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, টিদজানে থিয়াম একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। তিনি একসময় ফ্রান্সের একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং পরে দেশে ফিরে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিরোধী দল PDCI-এর গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *