রাজনৈতিক চাপে পদত্যাগের কথা ভাবছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন অস্থিরতা, ঠিক সেই সময়ে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
গত বছর আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনা।
কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এবং সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব দেখা যাচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সম্প্রতি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। সেনাবাহিনীর দীর্ঘ সময় ধরে বেসামরিক কাজে নিয়োজিত থাকার বিষয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁর মতে, দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্যদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আরও বেশি সময় নিতে চাইছে, যাতে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কারের সুযোগ থাকে।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, সেনাবাহিনীর প্রধান ড. ইউনূস সরকারের কিছু পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর তৈরি এবং দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশি কোনো কোম্পানির হাতে দেওয়ার পরিকল্পনা।
এছাড়াও, এলন মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা ‘Starlink’ চালুর বিষয়েও সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার অভাবের ইঙ্গিত দেয়। সরকার পরিচালনায় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে, যা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সময় এবং সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি চাইছে দ্রুত নির্বাচন এবং কিছু সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। অন্যদিকে, ছাত্র নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (National Citizen Party – এনসিপি) আরও কয়েকটি দল মনে করে, নির্বাচনের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করা প্রয়োজন।
বিশেষ করে গত বছরের ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার বিচার এবং সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চায় সরকার দ্রুত নির্বাচন দিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক। তারা মনে করে, ড. ইউনূসকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে দেওয়া ঠিক হবে না।
কারণ, দেশের মানুষ একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায়।
ড. ইউনূসের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পেছনে আরও একটি কারণ হিসেবে জানা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা না পাওয়া।
তিনি আশঙ্কা করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে এবং নির্বাচনে কারচুপির সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, ড. ইউনূস শনিবার বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন বলে জানা গেছে। এমতাবস্থায়, এখন সবার দৃষ্টি ড. ইউনূসের দিকে—তিনি কি পদত্যাগ করবেন, নাকি সংকট সমাধানে নতুন কোনো পথ খুঁজে বের করবেন?
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা