মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণবৈষম্য দূরীকরণের নীতির (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ায় বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানগুলো বাতিল করা হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, সেখানকার শিক্ষার্থীরা তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ভিন্ন পথ বেছে নিচ্ছেন। এই ঘটনায় সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় এক নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন জাতিগত ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন – কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক, এশীয়, এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এই অনুষ্ঠানগুলোতে তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং অর্জিত সাফল্যের উদযাপন করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডিইআই নীতি বাতিলের ঘোষণার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
ট্রাম্প এই ধরনের কর্মসূচিকে ‘অবৈধ ও অনৈতিক বৈষম্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যার ফলস্বরূপ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এলাইস মার্টিন-স্মিথ জানিয়েছেন, তাদের বার্ষিক কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত তাদের হতাশ করেছে, তবে তারা এতে বিস্মিত হননি। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায়ই ছাত্র-স্বার্থের চেয়ে খ্যাতি রক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়।
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে, শিক্ষার্থীরা তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ভিন্ন উপায় খুঁজে বের করছেন। মার্টিন-স্মিথ এবং তার সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি ভেন্যু খুঁজে বের করেছেন এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সমর্থন নিয়ে অনুষ্ঠানটি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের অনুষ্ঠানে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানানো হয়, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। সেখানকার কর্তৃপক্ষ ডিইআই নীতির কারণে সকল বিশেষ সমাবর্তন বাতিল করার ঘোষণা দেয়। তবে সেখানকার শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে যাননি।
ক্রিস্টোফার ওয়াশিংটন নামের এক গ্র্যাজুয়েট এবং তার বন্ধুদের উদ্যোগে একটি বিকল্প অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে সকল শিক্ষার্থী তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরার সুযোগ পান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্তার তিচভাকুন্দা বলেছেন, মূলধারার সমাবর্তনগুলোতে সাধারণত পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব থাকে। তাই এই ধরনের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিজেদের সংস্কৃতিকে উদযাপন করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের ‘ল্যাভেন্ডার গ্র্যাজুয়েশন’ নামক বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো বাতিলের শিকার হয়েছেন। ইউটাহ রাজ্যে, ডিইআই বিষয়ক আইন পাশের ফলে এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে, ‘প্রজেক্ট রেইনবো ইউটাহ’-এর মতো সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের একত্রিত করতে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় সাহায্য করছে। তারা বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজন করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের সংস্কৃতি উদযাপন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই ধরনের পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের পরিচিতি এবং সংস্কৃতির প্রতি আরও বেশি সচেতনতা তৈরি করছে। ভবিষ্যতে, এই ধরনের সংস্কৃতি-কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলো হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থন নাও পেতে পারে, তবে শিক্ষার্থীরা তাদের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে নতুন পথ খুঁজে বের করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন