যুক্তরাজ্যের এক মনোরম পথ: দুই সপ্তাহে সমুদ্র থেকে সমুদ্রের যাত্রা।
যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের সেন্ট বীজ থেকে শুরু করে পূর্ব উপকূলের রবিনহুড’স বে পর্যন্ত বিস্তৃত একটি পথ – ‘কোস্ট টু কোস্ট ওয়াক’। একজন আমেরিকান দম্পতি, যারা অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন, এই পথের আকর্ষণ অনুভব করেন।
তাঁরা প্রায় ১৯০ মাইল পথ হেঁটে, ইংল্যান্ডের তিনটি জাতীয় উদ্যান – লেক ডিস্ট্রিক্ট, ইয়র্কশায়ার ডেলস এবং নর্থ ইয়র্ক মুয়ার্স – অতিক্রম করে এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
যাত্রা শুরুর আগে, তাঁরা লন্ডনে পৌঁছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রকৃতির কাছাকাছি আসা এবং হেঁটে নতুন কিছু আবিষ্কার করা।
যাত্রা পথে তাঁরা সবুজ ঘাস, পাথুরে সৈকত, হালকা বাদামী পাহাড় সহ বিভিন্ন দৃশ্যের সাক্ষী হন। সেন্ট বীজের সৈকতে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দে তাঁদের যাত্রা শুরু হয়।
ঐতিহ্য অনুসারে, তাঁরা একটি পাথর কুড়িয়ে পকেটে রাখেন, যা পুরো পথ হেঁটে রবিনহুড’স বে-তে নর্থ সাগরের তীরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল।
লেক ডিস্ট্রিক্ট ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশের পর তাঁরা প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর রূপ দেখতে পান। এখানকার পথগুলি ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ – মাটির পথ, পাথরের রাস্তা, লেকের পাশের পথ এবং মাঝে মাঝে গ্রামের রাস্তা।
সবুজ তৃণভূমি, বনভূমি আর পাহাড়ের দৃশ্য তাঁদের মুগ্ধ করে। তাঁরা এখানকার পাথর দিয়ে তৈরি প্রাচীরগুলি দেখে বিস্মিত হন, যা এক একটি পাহাড় আর উপত্যকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছিল।
এরপর তাঁরা ইয়র্কশায়ার ডেলস ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ করেন। এখানকার সবুজ পাহাড় আর উপত্যকা দেখে তাঁরা যেন মুগ্ধ হয়ে যান।
এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁদের ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ ও ‘সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি’র মতো সিনেমায় দেখা দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।
যাত্রাপথে তাঁরা ছোট ছোট গ্রামগুলোতে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এখানকার বাড়িগুলো পাথর এবং স্লেট দিয়ে তৈরি ছিল, যা দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ছিল।
এখানকার স্থানীয় পাবগুলোতে তাঁরা অন্যান্য ভ্রমণকারীদের সাথে মিলিত হতেন। এই পাবগুলি ছিল স্থানীয়দের আড্ডাস্থল, যেখানে সবাই মিলেমিশে সময় কাটাতো।
পথের শেষ অংশে, তাঁরা যখন নর্থ ইয়র্ক মুয়ার্স ন্যাশনাল পার্কে পৌঁছান, তখন সেখানকার লতাপাতা ও ঘাস তাঁদের চোখে পরে।
এখানকার লতাপাতাগুলো ধূসর-সবুজ, মরিচা-বাদামী এবং কিছু কিছু স্থানে বেগুনী রঙের ছিল।
যাত্রাপথে তাঁরা স্থানীয় ইন এবং বিএন্ডবি-গুলোতে (Bed and Breakfast) থেকেছিলেন। বিএন্ডবি-তে থাকার অভিজ্ঞতা ছিল খুবই ব্যক্তিগত।
এখানে তাঁদের ভালোভাবে দেখাশোনা করা হতো, যা হোটেলের থেকে অনেক বেশি আন্তরিক ছিল।
সকালে নাস্তার জন্য তাঁদের ‘ফুল ইংলিশ ব্রেকফাস্ট’-এর স্বাদ নেওয়ার সুযোগ হয়, যেখানে ডিম, টোস্ট, চা, মাংস, এবং আরও অনেক কিছু পরিবেশন করা হতো।
অবশেষে, তাঁরা রবিনহুড’স বে-তে পৌঁছে যান, যেখানে উত্তর সাগর তাঁদের স্বাগত জানায়।
পকেট থেকে পাথরটি বের করে, তাঁরা তাঁদের যাত্রা শেষের আনন্দ অনুভব করেন। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর, তাঁরা প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন, যা তাঁদের জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা যোগ করেছে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার