মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন গবেষণায় সতর্ক করেছেন যে দেশটির প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট অঞ্চলে বড় ধরনের বন্যা ও সুনামির ঝুঁকি বাড়ছে।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে শুরু করে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ক্যাসকাডিয়া সাবডাকশন জোনে (CSZ) ভূমিকম্প এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলো ডুবে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে ঐ অঞ্চলের অনেক মানুষ ও সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
গবেষণাটি বলছে, ক্যাসকাডিয়া সাবডাকশন জোনে (CSZ) ভূমিকম্প হলে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন এবং ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ভূমি প্রায় ৬.৫ ফুট পর্যন্ত ডুবে যেতে পারে।
এর ফলে বর্তমানে যে পরিমাণ ভূমি প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে, তা প্রায় তিনগুণ বেড়ে যাবে।
বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রায় ৩৫ বর্গমাইল এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এতে প্রায় ১১৬ বর্গমাইল এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ভূমিকম্পের কারণে ভূমি দেবে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি – এই উভয় বিষয় সুনামির পূর্বাভাস মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
কারণ, বর্তমানের সুনামি পূর্বাভাস মানচিত্রগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে না।
ফলে ভবিষ্যতে সুনামির প্রভাব আরও অনেক বেশি হতে পারে।
ভার্জিনিয়া টেক-এর গবেষকরা কয়েক হাজার ভূমিকম্প মডেল তৈরি করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
তাঁরা ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য এই মডেলগুলো ব্যবহার করেছেন।
গবেষকরা দুটি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন: একটি হলো, যদি আজ ভূমিকম্প হয়, এবং অন্যটি হলো, যদি ৭৫ বছর পর, অর্থাৎ ২১০০ সালে ভূমিকম্প হয়।
তাঁদের মতে, ২১০০ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বাড়বে, যা ভূমিকম্পের প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, যদি আজ ভূমিকম্প হয়, তবে অতিরিক্ত ১৪,৩৫০ জন বাসিন্দা, ২২,৫০০টি স্থাপনা এবং ৭৭৭ মাইল রাস্তা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা ১৫ শতাংশ।
এই গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য হলো, প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট অঞ্চলের মানুষজনকে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা এবং দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত হতে উৎসাহিত করা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, “এ ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নিলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব, যা উপকূলীয় প্রতিবেশ ব্যবস্থা রক্ষা করতে সহায়ক হবে।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি বিবেচনা করি, তাহলে বুঝতে পারি যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে আমাদের অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষণা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যা দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি এবং প্রতিরোধের গুরুত্বকে আরও একবার তুলে ধরে।
তথ্যসূত্র: গবেষণা প্রতিবেদন।