একটা বিশাল পায়ের ছাপওয়ালা জন্তুর গল্প, যা প্রায়শই কানাডার অরণ্যে দেখা যায়, তা হয়তো অনেকেই শুনেছেন।
একেক দেশে এই কাল্পনিক প্রাণীর একেক নাম, যেমন—আমেরিকায় একে বলা হয় ‘বিগফুট’ আর হিমালয়ে ‘ইয়েতি’।
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের হ্যারিসন হট স্প্রিংস-এ এই ‘সাসকোয়াচ’ নামের প্রাণীটিকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আজও কৌতূহল রয়েছে।
এখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা একে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখেন।
হ্যারিসন হট স্প্রিংস-এর প্রাকৃতিক গরম জলের ঝর্ণা এবং সবুজ পাহাড়ের ঢালে ঘেরা বনভূমি—সবকিছুই যেন সাসকোয়াচের গল্পের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
প্রতি বছর জুন মাসে এখানে সাসকোয়াচ উৎসব হয়, যেখানে স্থানীয় ‘স্টস’এইলস’ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই কিংবদন্তীর গল্প শোনান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ‘সকোয়ামিশ’ আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণ হেনরি উইলিয়ামস-এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাসকোয়াচ তাদের কাছে প্রকৃতির রক্ষাকর্তা এবং মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সেতুবন্ধনকারী এক পবিত্র সত্তা।
হেনরি জানান, তাদের সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশ্বাস করে, সাসকোয়াচ যদি কারও সঙ্গে দেখা করতে আসে, তবে তা সৌভাগ্যের প্রতীক।
হ্যারিসন হট স্প্রিংস-এ সাসকোয়াচ-এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বহু পুরনো।
১৯২৯ সালে লেখক জে.ডব্লিউ. বার্নস ‘ম্যাকলিন্স’ ম্যাগাজিনে ‘ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লোমশ দৈত্যদের সাথে পরিচয়’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লেখেন, যেখানে তিনি ‘স্টস’এইলস’ সম্প্রদায়ের মানুষের দেখা ঘটনার বর্ণনা দেন।
২০১৭ সালে এখানে একটি সাসকোয়াচ জাদুঘরও খোলা হয়েছে, যেখানে এই রহস্যময় প্রাণীর বিভিন্ন প্রতিকৃতি, ছবি এবং তাদের সম্পর্কে নানা তথ্য রয়েছে।
পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য এখানে ‘সাসকোয়াচ বলস’ নামের মিষ্টি খাবার এবং বিশেষ ধরনের জুতাও বিক্রি হয়।
আসলে, বাংলাদেশের লোককথার ‘বনবিবি’ বা ‘ডাকিনী’র মতো সাসকোয়াচও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে।
প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষজন, প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম এবং তার রহস্যময়তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন।
পর্যটকদের মতে, সাসকোয়াচ-এর দেখা পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।
হেনরি উইলিয়ামস বলেন, “যদি আপনি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চান, তাহলে তাদের খাবার দিন।
তিনি আরও জানান, একবার তিনি একটি গাছের উপরে আপেল রেখে এসেছিলেন এবং পরের দিন দেখেন আপেলগুলো সেখানে নেই, যেন কেউ সেগুলো সম্পূর্ণভাবে তুলে নিয়েছে।
হ্যারিসন হট স্প্রিংস-এ বছরে প্রায় ২০,০০০ পর্যটকের আগমন ঘটে, যাদের অনেকেরই এই রহস্যময় প্রাণীর দেখা পাওয়ার আশা থাকে।
এখানকার গরম জলের ঝর্ণাগুলোর কাছে গেলে বনের গভীরতা থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস আর সাসকোয়াচের গল্প যেন একই সূত্রে বাঁধা।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক