ট্রাম্পের বিশাল বিল: কিভাবে ধনী হচ্ছে আরও ধনী?

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের কর বিল: বিত্তবানদের সুবিধা, কমছে দরিদ্রদের সহায়তা। যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভায় সম্প্রতি একটি বিল পাশ হয়েছে, যা দেশটির কর কাঠামো এবং সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থিত এই বিলটি একদিকে যেমন ধনী ব্যক্তিদের জন্য কর ছাড়ের ব্যবস্থা করছে, তেমনি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তা হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বিল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

বিলটির মূল বিষয়: রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত এই বিলে মূলত ট্রাম্পের আগের মেয়াদের কিছু কর ছাড়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর পাশাপাশি, মেডিকেড এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির (সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রাম বা স্ন্যাপ) মতো সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো সম্পদ পুনর্বণ্টনের ক্ষেত্রে একটি বিপরীত প্রক্রিয়া তৈরি করবে।

বিলটির আর্থিক প্রভাব: এই বিলের ফলে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি প্রায় ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪১২ লক্ষ কোটি টাকা) পর্যন্ত বাড়তে পারে। কর ছাড়ের কারণে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে, অন্যদিকে মেডিকেড ও খাদ্য সহায়তা খাতে বরাদ্দ কমানোর ফলে দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মেডিকেড খাতে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭৫ লক্ষ কোটি টাকা) এবং খাদ্য সহায়তা খাতে ২৬৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৯ লক্ষ কোটি টাকা) ফেডারেল সহায়তা কমানো হতে পারে।

কারা সুবিধা পাবে? এই বিলের ফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হবেন উচ্চবিত্তরা। কর ছাড়ের প্রায় ৬০ শতাংশ যাবে শীর্ষ ২০ শতাংশ ধনী মানুষের কাছে, যাদের বার্ষিক আয় ২ লক্ষ ১৭ হাজার ডলারের বেশি।

এছাড়া, শীর্ষ ৫ শতাংশ ধনী, যাদের আয় বছরে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার ডলারের বেশি, তাদেরও সুবিধা হবে। অন্যদিকে, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম।

আয়ের ওপর প্রভাব:

* শীর্ষ ২০ শতাংশ ধনী ব্যক্তি, যাদের বার্ষিক আয় ২ লক্ষ ১৭ হাজার ডলারের বেশি, তারা কর ছাড়ের ফলে বছরে গড়ে প্রায় ১২,৬৬০ ডলার (প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা) অতিরিক্ত আয় করতে পারবে, যা তাদের মোট আয়ে ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।

* মধ্যবিত্ত শ্রেণির, অর্থাৎ যাদের আয় ৬৭ হাজার থেকে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ডলারের মধ্যে, তাদের কর সাশ্রয় হবে প্রায় ১,৮৪০ ডলার (প্রায় ২ লক্ষ টাকা)। এর ফলে তাদের আয় ২.৪ শতাংশ বাড়বে।

* অন্যদিকে, যাদের আয় ৩৫ হাজার ডলারের কম, তাদের কর সাশ্রয় হবে মাত্র ১৬০ ডলার (প্রায় ১৮ হাজার টাকা)। ফলে তাদের আয় সামান্য ০.৮ শতাংশ বাড়বে।

খরচ কাটছাঁটের প্রভাব: বিলটিতে মেডিকেড ও খাদ্য সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

পেন-হুইটন বাজেট মডেলের হিসাব অনুযায়ী, যাদের বার্ষিক আয় ১৭ হাজার ডলার পর্যন্ত, তাদের গড় আয় ১৪.৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এছাড়া, যাদের আয় ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ডলারের বেশি, তারা ট্যাক্স কাটার সুবিধা হিসেবে ১২ হাজার ডলারের বেশি অতিরিক্ত আয় করতে পারবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ: এই বিলটি এখন সিনেটে যাবে, যেখানে এটি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। সিনেটররা বিলের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন এবং জনমতের ভিত্তিতে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন।

তবে, বিলটি শেষ পর্যন্ত আইনে পরিণত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিয়ে আলোচনা: যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি কমাতে এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোকে টেকসই করতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রয়োজন। তবে, রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে তেমন আলোচনা হচ্ছে না।

এই নিবন্ধটি সিএনএন এবং অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *