গাজায় বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারবর্গ দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান হিসেবে মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, জিম্মি মুক্তির বিষয়ে জিনির অনীহা রয়েছে।
সংবাদ সংস্থা সিএনএন সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ নিউজের খবর অনুযায়ী, মেজর জেনারেল জিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জেনারেল স্টাফদের সঙ্গে বৈঠকে জিম্মি বিনিময়ের বিরোধিতা করে বলেছেন, “আমি জিম্মি চুক্তির বিরোধী। এটা একটা চিরকালীন যুদ্ধ।” খবরে বলা হয়েছে, গত এক বছর ধরে তিনি এই অবস্থান বহাল রেখেছেন।
জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবার ফোরাম এক বিবৃতিতে জানায়, “যদি এই খবর সত্যি হয়, তাহলে এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং নিন্দনীয়। বিশেষ করে এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে, যিনি জিম্মিদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্বে আসতে চলেছেন।”
বর্তমানে, জিনি আইডিএফের প্রশিক্ষণ কমান্ড ও জেনারেল স্টাফ কোরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পদে থেকে জিম্মি আলোচনা প্রক্রিয়ায় তার তেমন কোনো প্রভাব ছিল না। তবে শিন বেতের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেলে হামাসের সঙ্গে আগের পরোক্ষ আলোচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফোরাম আরও বলেছে, “প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলে, তা হবে চরম অন্যায়। এটি সংহতি এবং কাউকে পিছনে না ফেলার পবিত্র কর্তব্যের পরিপন্থী।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে, আইডিএফ জানায়, “জেনারেল স্টাফদের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না।”
সামরিক বাহিনীতে জিনির কর্মজীবন মূলত একজন ফিল্ড অফিসার হিসেবে কেটেছে, গোয়েন্দা বিভাগে তার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অথচ শিন বেতের প্রধান কাজ হলো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।
ইসরায়েলি-মার্কিন সেনা ইতাই চেনের বাবা রুবি চেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “নেতানিয়াহু গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিচ্ছেন, যেন তিনি পুরো ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।”
বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু জিনিকে এই পদে মনোনয়ন দেন। এর আগের দিন ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, আগের শিন বেত প্রধান রনেন বারকে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে নেতানিয়াহুর স্বার্থের সংঘাত ছিল এবং নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ারও অধিকার নেই তার।
আদালত জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত “বৈধ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না এবং শিন বেত প্রধানের যথাযথ শুনানিও হয়নি।”
বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আইনি নির্দেশনার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তার স্বার্থের সংঘাত ছিল এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও ত্রুটি ছিল।”
তবে, এসব সত্ত্বেও নেতানিয়াহু জিনিকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, “এটি একটি জরুরি নিরাপত্তা বিষয়, এবং কোনো বিলম্ব রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সৈন্যদের ঝুঁকির কারণ হবে।” নেতানিয়াহু আরও জানান, তিনি জিনিকে বহু বছর ধরে চেনেন।
একজন সক্রিয় সেনা কর্মকর্তাকে শিন বেতের প্রধান হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি নজিরবিহীন। এরপর আইডিএফের চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির একটি বিবৃতি দিয়ে জানান, জিনি বেসামরিক পদে যোগ দেওয়ার আগে “আসন্ন দিনগুলোতে” অবসর গ্রহণ করবেন।
এই নিয়োগে দেশটির শীর্ষ জেনারেলও বিস্মিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে আইডিএফ সৈন্যদের যেকোনো আলোচনা চিফ অব জেনারেল স্টাফের অনুমোদনক্রমে হতে হবে।”
তথ্যসূত্র: সিএনএন