পুরুষদের বন্ধুত্বের সংকট: “ফ্রেন্ডশিপ” সিনেমার আলোকে একটি পর্যালোচনা।
বর্তমান সময়ে পুরুষদের মধ্যে বন্ধুত্বের ধারণা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “ফ্রেন্ডশিপ” (Friendship), অভিনেতা টিম রবিনসন এবং পল রুড অভিনীত, সেই আলোচনাকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
সিনেমাটি একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তির বন্ধুত্বের সন্ধানের গল্প, যেখানে পুরুষদের সামাজিক সম্পর্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জটিলতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি প্রদর্শিত হওয়ার পর দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যা এই সিনেমার বিষয়বস্তুর গভীরতা প্রমাণ করে।
সিনেমার গল্পটি গড়ে উঠেছে ক্রেইগ নামের একটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে, যিনি একাকী জীবন কাটান। একদিন তার প্রতিবেশী অস্টিনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু তাদের এই সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয় না।
ক্রেইগের কিছু অদ্ভুত আচরণের কারণে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ক্রেইগ তার একমাত্র বন্ধুর প্রতি এতটাই আকৃষ্ট হন যে, তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত হন।
সিনেমার এই দিকটি পুরুষদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কিছু দুর্বলতা এবং মানসিক টানাপোড়েনকে তুলে ধরে।
“ফ্রেন্ডশিপ” চলচ্চিত্রটি শুধুমাত্র একটি বিনোদনমূলক সৃষ্টি নয়, বরং এটি পুরুষদের বন্ধুত্বের সংকট নিয়ে একটি গভীর বিশ্লেষণ। ১৯৯০ সালে যেখানে প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ৫৫ জনেরই অন্তত ছয়জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, সেখানে ২০২১ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭ জনে।
অনেক পুরুষ তাদের আবেগ প্রকাশ করতে বা মানসিক সমর্থন পেতে সমস্যা অনুভব করেন। সমাজের এই পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ভিস্তা থিয়েটারে সিনেমাটি দেখার পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। কেউ কেউ সিনেমার বিষয়বস্তুর সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মিল খুঁজে পেয়েছেন, আবার কারও কাছে এটি ছিল অতিরিক্ত বাস্তব ও হতাশাজনক।
৩৫ বছর বয়সী জেসি অ্যামোরাটানাসুচাদ বলেন, সিনেমাটি যেন তার জীবনের প্রতিচ্ছবি। তিনি আরও যোগ করেন, পুরুষদের জীবনে অন্য পুরুষদের উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই সিনেমা দেখলে বোঝা যায়।
পুরুষদের মধ্যে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এই সংকট সম্ভবত সামাজিক রীতিনীতি এবং মানসিক প্রকাশের সীমাবদ্ধতার কারণে তৈরি হয়েছে। অনেক সময় পুরুষেরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন, যা তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে।
সিনেমাটি সেই দিকটি তুলে ধরে, যা দর্শকদের মধ্যে গভীর আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরুষদের বন্ধুত্বের এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। পুরুষদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা এবং আবেগ প্রকাশের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বন্ধুত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। “ফ্রেন্ডশিপ” সিনেমাটি সেই পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করেছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian