নতুন জিলেণ্ডে ৬টি অসাধারণ রোড ট্রিপ: ঘুরে দেখুন!

নিউ জিল্যান্ড ভ্রমণে আকর্ষণীয় সড়কপথ: প্রকৃতির মাঝে ভ্রমণের এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দেশ নিউ জিল্যান্ড, যা ‘আও tearoa’ নামেও পরিচিত (মাওরি ভাষায় যার অর্থ ‘সাদা মেঘের দেশ’), এখানে ভ্রমণের সেরা উপায় হলো গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ানো। পাহাড়, সবুজ উপত্যকা আর সমুদ্রের কাছাকাছি রাস্তা ধরে ভ্রমণের মজাই আলাদা।

যারা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য নিউ জিল্যান্ডে কিছু অসাধারণ সড়কপথ রয়েছে। নিচে তেমনই কয়েকটি পথের বর্ণনা দেওয়া হলো:

দক্ষিণ দ্বীপ

১. ক্রাইস্টচার্চ থেকে ফক্স গ্লেসিয়ার হয়ে গ্রেইমাউথ ও পুনাকাইকি:

এই পথটি হিমবাহ এবং প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার জন্য সেরা। ক্রাইস্টচার্চ থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যান্টারবেরি সমভূমির সবুজ আর পাহাড়ী অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গেলে দেখা মিলবে অসাধারণ সব জলপ্রপাত আর পাহাড়ি অঞ্চলের বিশেষ পাখি ‘কেয়া’র (Kea)।

এরপর আর্থার’স পাস ন্যাশনাল পার্ক অতিক্রম করে ওয়েস্ট কোস্টের প্রধান শহর গ্রেইমাউথে পৌঁছানো যায়। এখানে শান্টিটাউনে (Shantytown) সোনা খোঁজার মজাও নিতে পারেন।

এরপর পুনাকাইকিতে (Punakaiki) বিখ্যাত ‘প্যানকেক রকস’ ও সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে তৈরি হওয়া ‘টাইডাল ব্লোহোলস’ দেখা যেতে পারে। সবশেষে, ফ্রাঞ্জ জোসেফ গ্লেসিয়ার এবং ফক্স গ্লেসিয়ারের দিকে যাত্রা করুন।

এখানকার লেক ম্যাথেসনের স্বচ্ছ পানিতে পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি দেখা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

২. ক্রাইস্টচার্চ থেকে নেলসন হয়ে হানমার স্প্রিংস ও কাইকোরা:

যারা সুন্দর ওয়াইনারি এবং সবুজ প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই পথটি আদর্শ। ক্রাইস্টচার্চ থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যান্টারবেরির ওয়াইন অঞ্চল দিয়ে গেলে পেগাসাস বে ও টেরেস এজের মতো চমৎকার ওয়াইনারিগুলো চোখে পড়বে।

এরপর হানমার স্প্রিংসে (Hanmer Springs) গিয়ে এখানকার উষ্ণ প্রস্রবণে (geothermal pool) গা এলিয়ে দিতে পারেন। এখানকার বনপথ ধরে হেঁটে বা বাইক চালিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যেতে পারে।

এরপর ইনল্যান্ড রোড ধরে কাইকোরা উপকূলের দিকে এগিয়ে গেলে ‘হোয়েল ওয়াচ কাইকোরা’র (Whale Watch Kaikōura) সাথে তিমি ও ডলফিন দেখার সুযোগ রয়েছে। ওহাউ পয়েন্টে (Ohau Point) রাস্তার পাশে পাথরের উপর বিশ্রামরত সিল মাছও দেখা যায়।

সবশেষে, ব্লেনহেইম হয়ে নেলসনের পথে যাত্রা করুন, যা অ্যাবেল তাসমান ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বার।

৩. কুইন্সটাউন থেকে ডানেডিন হয়ে টি আউ ও ক্যাটলিনস:

যারা অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তাদের জন্য কুইন্সটাউন থেকে এই পথটি দারুণ। এখানে কাওয়ারাউ ব্রিজ-এ (Kawarau Bridge) বানজি জাম্পিংয়ের মতো অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।

এরপর টি আউ (Te Anau) হয়ে ফিওর্ডল্যান্ডে (Fiordland) যান। এখানে লেক টি আউ-এর (Lake Te Anau) পাশে অবস্থিত ‘গ্লোওয়ার্ম কেভস’ (Glowworm Caves) ঘুরে দেখতে পারেন।

মিলফোর্ড সাউন্ডে (Milford Sound) নৌকায় চড়ে এখানকার জলপ্রপাত ও পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে। এরপর ক্যাটলিনসের (Catlins) মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ডানেডিনের দিকে এগিয়ে যান।

ডানেডিনে মাওরি ও স্কটিশ সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়। এখানকার লারনাক ক্যাসল (Larnach Castle) একটি উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ।

উত্তর দ্বীপ

৪. অকল্যান্ড থেকে কেপ রেইঙ্গা হয়ে ভাইটাঙ্গি ও বে অফ আইল্যান্ডস:

ঐতিহাসিক স্থান ও সুন্দর সমুদ্রের জন্য এই পথটি বেছে নিতে পারেন। অকল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে উত্তরে গেলে দেখা মিলবে এখানকার পাহাড় ও বিভিন্ন আগ্নেয়গিরির।

স্কাই টাওয়ার থেকে পুরো শহরের দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে। এরপর ওয়াংগারি হয়ে উত্তরে গেলে পুহুত কাওয়া গাছের (Pōhutukawa trees) লাল ফুলগুলি গ্রীষ্মকালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

এখানে ওটুইহাউ ওয়াংগারি জলপ্রপাত ও পোর নাইট আইল্যান্ডসের (Poor Knights Islands) মতো সুন্দর জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করতে পারেন। এরপর ভাইটাঙ্গিতে (Waitangi) ১৮৪০ সালে ব্রিটিশ ক্রাউন ও মাওরি প্রধানদের মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক ‘ওয়াইটাঙ্গি চুক্তি’র স্থানটি পরিদর্শন করতে পারেন।

এরপর কেপ রেইঙ্গার দিকে এগিয়ে যান, যা নিউ জিল্যান্ডের একেবারে উত্তর প্রান্তে অবস্থিত।

৫. অকল্যান্ড থেকে হোয়াকাটানে হয়ে করোম্যান্ডেল ও তাউরাঙ্গা:

যারা সমুদ্র ও সুন্দর সৈকত ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই পথটি আদর্শ। অকল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে সোনার খনির শহর থেমস-এর দিকে যান।

এরপর করোম্যান্ডেল উপদ্বীপের (Coromandel peninsula) সুন্দর সৈকতগুলোতে ভ্রমণ করতে পারেন। এখানকার ক্যাথিড্রাল কোভ ও হট ওয়াটার বিচের মতো জায়গাগুলোতে গরম জলের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।

এরপর ওয়াংগামাতা, মাউন্ট মাউঙ্গানুই এবং তাউরাঙ্গার মতো জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করুন। সবশেষে, হোয়াকাটানে যান, যেখানে রাস্তার পাশে সবুজ গাছপালা ও বিভিন্ন ফল বাগান দেখা যায়।

৬. ওয়েলিংটন থেকে গিসবোর্ন হয়ে নেপিয়ার ও ওয়াইরোয়া:

যারা সংস্কৃতি ও স্থাপত্য ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই পথটি উপযুক্ত। ওয়েলিংটন থেকে যাত্রা শুরু করে নেপিয়ারের (Napier) দিকে যান, যা ১৯৩০-এর দশকের আর্ট ডেকো স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত।

এখানকার তে মাতা পিক (Te Mata Peak) থেকে নেপিয়ার ও মাহিয়া উপদ্বীপের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়। এরপর ওয়াইরোর দিকে এগিয়ে যান, যা তে উরেওয়েরা অঞ্চলের প্রবেশদ্বার।

সবশেষে, গিসবোর্নের (Gisborne) দিকে যান, যা সারা বিশ্বে গ্রীষ্মকালে প্রথম সূর্যোদয় দেখায়।

এই সড়কপথগুলো নিউ জিল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের চমৎকার সুযোগ করে দেয়। প্রতিটি পথের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *