যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের এক সেন্টের মুদ্রা, যা ‘পেনি’ নামে পরিচিত, তৈরি করা বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কয়েক বছর পর হয়তো এই মুদ্রাটি আর বাজারে দেখা যাবে না।
বাংলাদেশে যেমন পয়সা ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ছে, অনেকটা তেমন পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে সেখানে। খবরটি অনেকের মনে কৌতূহল জাগাতে পারে, কারণ বাজারে প্রচলিত মুদ্রা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, তারা প্রায় ২৩0 বছরের বেশি সময় ধরে তৈরি করে আসা এই মুদ্রাটির উৎপাদন ধীরে ধীরে কমিয়ে দেবে। তবে এখনই পেনি একেবারে বাতিল হয়ে যাচ্ছে না।
এটি এখনও দেশটির বৈধ মুদ্রা হিসেবে বহাল থাকবে এবং অনেক দোকানে লেনদেনের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হবে। কিন্তু এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে এর ব্যবহারেও পরিবর্তন আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতাদের সংগঠন ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ) জানিয়েছে, উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের সদস্যরা কিছু দিন পেনি ব্যবহার চালিয়ে যাবেন। তবে বাজারে পেনি সরবরাহ কমে গেলে, অনেক দোকানে নগদ লেনদেনের সময় হিসাবকে কাছের পাঁচ সেন্টের ঘরে (নিকল) রাউন্ড আপ বা রাউন্ড ডাউন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো পণ্যের দাম হয় ১.০২ ডলার, তবে ক্যাশিয়ার হয়তো এটিকে ১.০৫ ডলারে পরিণত করবেন।
এনআরএফ এর সরকারি সম্পর্ক বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর ডিলান জিয়ন জানিয়েছেন, “খুচরা বিক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হলো গ্রাহকদের ভালো পরিষেবা দেওয়া এবং এই পরিবর্তনটি সহজভাবে সম্পন্ন করা।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১১৪ বিলিয়ন পেনি প্রচলিত আছে। ট্রেজারি বিভাগের মতে, এই বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ‘খুব কম’ ব্যবহার করা হচ্ছে।
অনেক পেনি হয়তো বাড়ির ড্রয়ারে বা অন্য কোনো অগোছালো স্থানে পড়ে আছে। হিসাব বলছে, এই সব পেনি জমা করলে প্রায় ১৩ তলা একটি ভবনের সমান জায়গা ভরানো সম্ভব।
অনেক দোকানে গ্রাহকরা তাদের কাছ থেকে পাওয়া ভাঙতি পয়সাগুলো দানবাক্সে ফেলে দেন, যা তাদের হিসাবেও আসে না।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ কনভিনিয়েন্স স্টোরস (NACS)-এর মুখপাত্র জেফ লেনার্ড জানান, বাজারে প্রচুর পরিমাণে পেনি থাকায় এখনই এর সংকট হবে না। তবে ব্যাংক থেকে দোকানগুলোতে নতুন পেনি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে, তারা হয়তো লেনদেন সহজ করার জন্য হিসাবকে রাউন্ড আপ বা রাউন্ড ডাউন করতে শুরু করবে।
তবে, ইলেকট্রনিক লেনদেন, যেমন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। এক্ষেত্রে হিসাব সবসময় নির্ভুলভাবে করা হবে।
কানাডার উদাহরণ থেকে জানা যায়, তারা ২০১২ সালে পেনি তৈরি বন্ধ করে দিলেও, সেটি এখনো বৈধ মুদ্রা হিসেবে চলে।
কানাডার অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেনিগুলো তাদের মূল্য ‘নিশ্চিতকালের জন্য’ ধরে রাখবে। যদি কোনো গ্রাহক পেনি দিয়ে লেনদেন করতে চান, তবে সম্ভবত বেশিরভাগ দোকান তা গ্রহণ করবে।
লেনার্ড বলেন, “ব্যবসার একটি কথা আছে, ‘কখনও একটি পেনি’র কারণে গ্রাহক হারাবেন না’। যদি কেউ পেনি দিয়ে পরিশোধ করতে চান, তবে সম্ভবত অধিকাংশ ব্যবসায়ী গ্রাহকদের খুশি করতে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা ব্যবসায়ীরা এবং সাধারণ গ্রাহকরা উভয়ই প্রভাবিত হবেন। বাংলাদেশেও, যেখানে ক্ষুদ্র অঙ্কের মুদ্রা যেমন পয়সা ধীরে ধীরে অপ্রচলিত হয়ে যাচ্ছে, সেখানে এমন ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন