পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে আজও ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ২০২০ সালের ২৫শে মে, যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চৌভিন-এর হাতে নিহত হন ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড।
পুলিশের হাতে আটকের সময় শ্বাসরোধ হয়ে ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা বিশ্বে পুলিশি নির্যাতন ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ডেরেক চৌভিন প্রায় নয় মিনিট ধরে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন, যখন ফ্লয়েড “আমি শ্বাস নিতে পারছি না” বলে আর্তনাদ করছিলেন। এই ঘটনার জেরে চৌভিনকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং মিনিয়াপলিস পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধে একটি ফেডারেল তদন্ত শুরু হয়।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর জন্য চৌভিন এবং পুলিশের অপব্যবহারকে দায়ী করা হলেও, দ্রুতই একটি ভিন্ন ধারণা জন্ম নেয়। সেই ধারণা অনুযায়ী, ফ্লয়েডের মৃত্যু মাদক ওভারডোজের কারণে হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পাঁচ বছর পরেও, এই মিথ্যা তথ্যটি এখনো বিভিন্ন মহলে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের মধ্যে শোনা যায়।
এমনকি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিনও সম্প্রতি ডেরেক চৌভিনকে ক্ষমা করার দাবি জানিয়েছেন এবং ফ্লয়েডের মৃত্যু মাদক ওভারডোজের কারণে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
যদিও আদালতের রায়ে এবং ময়না তদন্তে ফ্লয়েডের মৃত্যুর মূল কারণ হিসেবে পুলিশের নৃশংসতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক সমালোচক এই ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। তারা ফ্লয়েডের অতীতের কিছু ঘটনা, যেমন তার বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এবং তার মৃত্যুর পরবর্তী প্রতিবাদগুলো নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্ধতিগত বর্ণবাদ (systemic racism) এই ধরনের ভুল তথ্যের বিস্তার এবং টিকে থাকার পেছনে একটি বড় কারণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠী তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হয়, তখন তাদের দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা কমানোর চেষ্টা করা হয়। জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ফ্লয়েডের প্রতি অবিচারকে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা প্রতিবাদ আন্দোলনকে দুর্বল করতে সহায়তা করে।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর কারণ হিসেবে মাদক ওভারডোজের যে কথা বলা হয়, তা মূলত ২০১৬ সালের একটি ময়না তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। রিপোর্টে ফ্লয়েডের শরীরে “ফেন্টানাইল”-এর উপস্থিতি এবং “মেথাম্ফেটামিন”-এর ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়।
তবে, রিপোর্টে ফ্লয়েডের মৃত্যুর কারণ হিসেবে মাদককে সরাসরি দায়ী করা হয়নি। বরং, বলা হয়েছে যে ফ্লয়েডকে আটকের সময় শ্বাসকষ্টের কারণে তার কার্ডিওপালমোনারি অरेस्ट হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে, ভুল তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। খ্যাতি লাভের আশায় অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই ধরনের ভুল তথ্য প্রচার করে থাকেন। এর ফলে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যেকোনো দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভুল তথ্যের বিস্তার একটি বড় বাধা। তাই, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। সঠিক তথ্য যাচাই করে, সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা