মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেইড বিল নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি: কতটা সত্য?
যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য বীমা প্রোগ্রাম মেডিকেইড নিয়ে রিপাবলিকানদের আনা একটি বিল বর্তমানে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি ছিল, এই বিলটি কেবল ‘অপচয়, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা’ দূর করবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিলটিতে মেডিকেইডের কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যা ট্রাম্পের কথার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। খবরটি পর্যালোচনা করা হলো।
মেডিকেইড হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প, যা কম আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত বিলে এই প্রোগ্রামে বড় ধরনের কাটছাঁটের পরিকল্পনা রয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি ছিল, এই বিলের মূল উদ্দেশ্য হলো অপচয়, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করা। তিনি বেশ কয়েকবার জোর দিয়ে বলেছিলেন, মেডিকেইড, মেডিকেয়ার বা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তাবিত বিলটিতে মেডিকেইডের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কংগ্রেসের বাজেট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, এই পরিবর্তনের ফলে অন্তত ৮৬ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য বীমা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হেলথ পলিসি রিসার্চের পরিচালক, লেইটন কু বলেন, “বিলটিতে খুব সামান্য অংশই রয়েছে, যা দুর্নীতি বা ভুল কমানোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এখানে কিছু ছোটখাটো বিষয় আছে, যেমন—ভুয়া ঠিকানা যাচাই করা বা মৃত ব্যক্তিদের তালিকা পরীক্ষা করা।
তবে মূল বিষয়গুলো দুর্নীতি, অপচয় বা ভুলের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এগুলো মূলত রিপাবলিকানদের নীতিগত পছন্দের প্রতিফলন।”
স্বাস্থ্যনীতি গবেষণা সংস্থা কেএফএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেডিকেইড প্রোগ্রামের পরিচালক রবিন রুডউইটজ একমত পোষণ করে বলেন, “বিলটিতে ট্রাম্প যা বলছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ফেডারেল ব্যয়ের পরিমাণ কমানো এবং এর ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি শুধু দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনা দূর করার চেয়ে অনেক বেশি কিছু।”
বিলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা চূড়ান্ত ভোটের আগে পরিবর্তন করা হতে পারে। তবে এর কিছু অংশ যুক্তও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিলটির প্রধান কয়েকটি বিষয় হলো:
* **অনথিভুক্ত অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা:** বিলে এমন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে রাজ্য সরকারগুলোর জন্য অনথিভুক্ত অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
বর্তমানে ১৪টি রাজ্য এবং কলম্বিয়া জেলার বাসিন্দারা, বিশেষ করে শিশুরা, তাদের অভিবাসন অবস্থা নির্বিশেষে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে। এই বিলের ফলে, এই রাজ্যগুলোতে ফেডারেল সরকারের দেওয়া মেডিকেইড বাবদ অর্থের পরিমাণ কমতে পারে, যার ফলস্বরূপ নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবাতেও প্রভাব পড়তে পারে।
* **কর্মসংস্থান বিষয়ক শর্ত:** বিল অনুযায়ী, যারা কর্মসংস্থান বিষয়ক আইনের আওতায় মেডিকেইড সুবিধা পান, তাদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় কাজ করতে হবে অথবা কিছু যোগ্যতামূলক কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে।
যেমন—শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে, পরিবারের সদস্যের দেখাশোনা করলে অথবা স্কুলে যাওয়া ইত্যাদি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের শর্ত মূলত সুবিধাভোগীদের জন্য অতিরিক্ত জটিলতা তৈরি করবে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেঞ্জামিন ডি সোমার্স বলেন, “কর্মসংস্থান বিষয়ক শর্ত মূলত প্রোগ্রামটিতে কারা যোগ্য, সেই নিয়ম পরিবর্তন করে এবং সুবিধাভোগীদের জন্য জটিলতা বাড়ায়।”
* **গর্ভনিরোধক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে অর্থ প্রদান বন্ধ করা:** বিলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, পরিবার পরিকল্পনা বা প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে মেডিকেইডের অর্থ দেওয়া বন্ধ করা।
এর ফলে প্ল্যানড প্যারেন্টহুডের মতো সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা গর্ভপাতের মতো পরিষেবাও দিয়ে থাকে।
* **খরচ কমানোর অন্যান্য পদক্ষেপ:** বিলে খরচ কমানোর জন্য আরও কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।
যেমন—বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৩৫ ডলার পর্যন্ত সহ-অর্থ (copay) প্রদান করতে হতে পারে এবং মেডিকেইডের জন্য আবেদন করার পরে পূর্ববর্তী এক মাসের চিকিৎসা খরচ পাওয়া যেতে পারে, যা আগে ৯০ দিন পর্যন্ত পাওয়া যেত।
সোমার্সের মতে, “এই বিলে মেডিকেইড বাঁচানোর প্রধান উপায় হলো প্রোগ্রামটিতে অন্তর্ভুক্তির সংখ্যা কমানো।”
ট্রাম্পের দাবি ছিল, এই বিল মেডিকেইডের কোনো পরিবর্তন করবে না, বরং কেবল ‘অপচয়, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা’ দূর করবে। তবে বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিলটিতে এমন সব ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যা ট্রাম্পের রাজনৈতিক আদর্শ ও রিপাবলিকানদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এই বিলে রাজ্যগুলোকে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া বন্ধ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে, সুবিধা পাওয়ার জন্য কর্মীদের কাজ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে এবং প্ল্যানড প্যারেন্টহুডের মতো সংস্থাকে অর্থ দেওয়া বন্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সুতরাং, ট্রাম্পের এই বক্তব্য সঠিক নয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা