পোল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জনজোয়ার! দুই প্রার্থীর সমর্থনে রাজপথে

পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্বের আগে বিভক্ত জনমত, ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়।

পোল্যান্ডে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব। আগামী রবিবারের নির্বাচনে চূড়ান্ত লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন ওয়ারশ’র মেয়র রাফাল ট্রাসকোওস্কি এবং কট্টর জাতীয়তাবাদী প্রার্থী ক্যারোল নাওরোকি।

এই নির্বাচন দেশটির ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, সে ব্যাপারে একটা গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেবে। কারণ এই নির্বাচনের ফলাফল একদিকে যেমন পোল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে, তেমনি এর প্রভাব পড়তে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে দেশটির সম্পর্কেও।

নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তে, দুই প্রার্থীর সমর্থনে বিশাল জনসমাগম হয়েছে। রাজধানী ওয়ারশতে ট্রাসকোওস্কির পক্ষে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলেন, যেখানে নাওরোকির সমর্থনে জড়ো হন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

ট্রাসকোওস্কি উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত, যিনি ইইউ’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। অন্যদিকে, নাওরোকি জাতীয়তাবাদী এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির অনুসারী হিসেবে পরিচিত, যিনি পোল্যান্ডকে আরও রক্ষণশীল পথে নিয়ে যেতে চান।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক, যিনি ট্রাসকোওস্কির প্রধান সমর্থক, আশা করছেন এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি ইউরোপপন্থী সংস্কারগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তিনি চান, পোল্যান্ড যেন ইইউ’র সঙ্গে একাত্মতা বজায় রাখে।

ট্রাসকোওস্কি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো পোল্যান্ড, ইউরোপ এবং সারা বিশ্ব।

অন্যদিকে, নাওরোকি তার সমর্থকদের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন এমন একজন হিসেবে যিনি পোল্যান্ডের ঐতিহ্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়ছেন। তার সমর্থকরা প্রায়ই “পোল্যান্ডই সবার আগে” শ্লোগান ব্যবহার করেন, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির প্রতিধ্বনি।

নাওরোকি তার সমাবেশে অভিযোগ করেন, “আমি তাদের কণ্ঠস্বর, যাদের কথা আজ ডোনাল্ড টাস্ক শোনেন না। আমি চাই না পোল্যান্ডের স্কুলগুলোতে কোনো বিশেষ মতাদর্শ চাপানো হোক, আমাদের কৃষি ধ্বংস হোক অথবা আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হোক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন পোল্যান্ডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে যেমন এটি ইইউ’র সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তেমনই দেশটির গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নেও এর প্রভাব পড়বে।

অনেকের মতে, নাওরোকি জিতলে পোল্যান্ড সম্ভবত ইইউ থেকে দূরে সরে যেতে পারে এবং ট্রাম্পের অনুসারী অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারে।

এই নির্বাচনের ফলাফল শুধু পোল্যান্ডের জনগণের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং পুরো ইউরোপের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নীতি এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়েও একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *