বিখ্যাত নারী অধিকার কর্মী এবং লেখিকা সুসান ব্রাউনমিলার, যিনি ১৯৭০-এর দশকে যৌন নিপীড়ন বিষয়ে যুগান্তকারী একটি বই লিখে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন, ৯০ বছর বয়সে মারা গেছেন। শনিবার নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ব্রাউনমিলারের উইল প্রস্তুতকারক এমিলি জেন গুডম্যান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সুসান ব্রাউনমিলার শুধু একজন লেখিকা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক অনুসন্ধানী সাংবাদিক, যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনকারী এবং নাগরিক অধিকার কর্মী। ষাটের দশকে নারীবাদী আন্দোলনের সূচনা লগ্নে তিনি এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং গ্লোরিয়া স্টেইনেম, বেটি ফ্রিডান এবং কেট মিলেট-এর মতো বিশিষ্ট নারীবাদীদের সঙ্গে কাজ করেন।
ব্রাউনমিলারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত ‘অ্যাগেইনস্ট আওয়ার উইল: মেন, উইমেন অ্যান্ড রেইপ’ (Against Our Will: Men, Women and Rape) বইটি। এই বইয়ে তিনি ধর্ষণকে শুধুমাত্র যৌন আকাঙ্ক্ষা হিসেবে নয়, বরং ক্ষমতার একটি চরম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
বইটি ধর্ষণ, এর কারণ, এর ব্যাপকতা এবং সমাজে এর প্রভাব সম্পর্কে গভীর আলোচনা করেছে। তিনি যুদ্ধ এবং কারাগারের মতো কঠিন পরিস্থিতিতে ধর্ষণের স্বরূপ তুলে ধরেছেন, শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতন এবং দাম্পত্য জীবনে ধর্ষণের বিষয়গুলোও আলোচনা করেছেন।
তবে, ব্রাউনমিলারের কাজের কিছু দিক বিতর্কিতও ছিল। বিশেষ করে, তিনি যখন ১৯৫৫ সালে মিসিসিপিতে কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর এমmett Till-এর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন, তখন অনেকে তার সমালোচনা করেন।
তিনি যদিও এমmett Till-এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছিলেন, তবে সেই ঘটনার জন্য Till-কে কিছুটা হলেও দায়ী করেছিলেন। এই ধরনের মন্তব্যের কারণে নারীবাদী এবং নাগরিক অধিকার কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল।
সুসান ব্রাউনমিলারের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ফেমিনিটি’ এবং ‘ওয়েভারলি প্লেস’। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন।
সুসান ব্রাউনমিলারের প্রয়াণে নারী অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আন্দোলনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তাঁর কাজ নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং নিপীড়ন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।
তাঁর লেখাগুলি আজও বিশ্বজুড়ে নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস