ভেনেজুয়েলার বিতর্কিত নির্বাচন: গায়ানার বুকে ‘নতুন রাজ্য’!

ভেনেজুয়েলার বিতর্কিত পদক্ষেপ: গায়ানার তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলে নির্বাচন

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা সম্প্রতি বিতর্কিতভাবে তাদের প্রতিবেশী গায়ানার একটি তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। এই অঞ্চলের নাম হলো এসেকুইবো, যা আন্তর্জাতিকভাবে গায়ানার অংশ হিসেবে স্বীকৃত। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলা একটি গভর্নর এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছে, যা গায়ানার সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।

এসেকুইবোর জনসংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি, যা গায়ানার মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের বেশি। তবে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। গায়ানার সরকার এই নির্বাচনকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং একে তাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছে। গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলী এই নির্বাচনকে ‘কেলেঙ্কারি’, ‘মিথ্যা’ এবং ‘সুযোগসন্ধানী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এই নির্বাচনের আগে ঘোষণা করেছিলেন যে, এসেকুইবোকে তারা তাদের দেশের ২৪তম রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করে। এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভেনেজুয়েলার দীর্ঘদিনের দাবি রয়েছে। তারা মনে করে, একসময় এই অঞ্চল তাদের সীমানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনাল ১৮৯৯ সালে একটি রায় দিয়ে গায়ানার পক্ষে সীমান্ত নির্ধারণ করে, ভেনেজুয়েলা সেই রায়কে প্রত্যাখ্যান করে।

এই নির্বাচনের ফলে গায়ানা সরকার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কারণ এসেকুইবোতে বিশাল তেল ভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়েছে, যা এই অঞ্চলের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গায়ানা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ হতে চলেছে। তবে তাদের সামরিক শক্তি ভেনেজুয়েলার তুলনায় অনেক দুর্বল। এই পরিস্থিতিতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আরো জোরদার করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ভেনেজুয়েলার এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং গায়ানার আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে দুর্বল করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ বলেছেন, এই অঞ্চলের ওপর তাদের ঐতিহাসিক, আইনগত এবং নৈতিক অধিকার রয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-এ বর্তমানে এই সীমান্ত বিরোধের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আদালত, নির্বাচনের মাধ্যমে যেন কোনো পরিবর্তন না আনা হয়, সেই মর্মে ভেনেজুয়েলাকে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ভেনেজুয়েলা আদালতের এখতিয়ার মানতে রাজি নয়।

ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন ভেনেজুয়েলার একটি কৌশল, যা বিতর্কিত অঞ্চলের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে। এর ফলে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

উল্লেখ্য, এসেকুইবোর আয়তন প্রায় ফ্লোরিডার সমান। যদি বাংলাদেশের জেলার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে এটি বৃহত্তর খুলনা বিভাগের সমান।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *