যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শাউভিনকে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করার ঐতিহাসিক বিচারের স্মৃতিচারণ করলেন বিচারক পিটার ক্যাহিল। এই মামলার শুনানির দায়িত্ব পালন করা ক্যাহিল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু এবং শাউভিনের বিচার আমেরিকাজুড়ে বর্ণবাদ ও পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।
সাক্ষাৎকারে ক্যাহিল জানান, এই মামলাটি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। যদিও তিনি মনে করেন, এটিই তাঁর পুরো কর্মজীবনের পরিচয় নয়।
বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর ভেতরের পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ক্যাহিলের ভাই একসময় উইসকনসিনের পুলিশ বিভাগে কর্মরত ছিলেন এবং পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
শাউভিনের বিচার চলাকালীন সময়ে রাজনৈতিক চাপ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ক্যাহিল জানান, রাজনীতিবিদদের মন্তব্যগুলো তাঁকে হতাশ করেছিল। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, মিনিয়াপলিস সিটি কাউন্সিলের কিছু সদস্যের ‘পুলিশিং ব্যবস্থা ভেঙে দাও’ ধরনের মন্তব্যের কথা।
ক্যাহিল চেয়েছিলেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না।
শাউভিনের আইনজীবীর বিচার প্রক্রিয়া অন্য রাজ্যে সরিয়ে নেওয়ার আবেদন প্রসঙ্গে ক্যাহিল রসিকতা করে বলেছিলেন, “আমরা কি তাহলে বিচারটা মঙ্গলে নিয়ে যাব?”
বিচারক হিসেবে মামলাটির দায়িত্ব পাওয়ার আগে ক্যাহিল জানতেন, এই বিচার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। যদিও তিনি সরাসরি এই মামলার দায়িত্ব নিতে চাননি, তবুও তিনি মনে করেন, একজন বিচারক হিসেবে দেশের প্রতি তাঁর দায়িত্ব ছিল।
ক্যাহিল জানান, এই মামলা পরিচালনার সময় তিনি সিনিয়র বিচারপতিদের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ১৯৯৫ সালের ও. জে. সিম্পসন মামলার বিচারক ল্যান্স ইটো।
ইটো ক্যাহিলকে একটি কার্ড পাঠিয়ে এই বিচারের জন্য ‘শান্তি ও প্রজ্ঞা’ কামনা করেছিলেন।
বিচার চলাকালীন সময়ে আদালত কক্ষে ক্যামেরার ব্যবহার নিয়ে ক্যাহিল বলেন, “আমি মনে করি, যদি মানুষ সরাসরি বিচার প্রক্রিয়াটি না দেখে, তাহলে তারা ফলাফলের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, সবারই ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইটের প্রতি একটা অনীহা থাকে, কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো অনুশোচনা করেন না।
বিচার চলাকালীন সময়ে ক্যাহিল তাঁর ব্যক্তিগত ও অফিসের ঠিকানায় অসংখ্য ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ চিঠি, ইমেইল এবং ফোন কল পেয়েছিলেন। তিনি জানান, অনেকে তাঁকে শাউভিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না দেওয়ায় অভিযুক্ত করেছিলেন, আবার কেউ কেউ শাউভিনকে ক্ষমা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শাউভিনের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগ—সেকেন্ড-ডিগ্রি মার্ডার, থার্ড-ডিগ্রি মার্ডার এবং সেকেন্ড-ডিগ্রি ম্যানস্লটার—আদালতে প্রমাণিত হওয়ার পর ক্যাহিল তাকে ২২.৫ বছরের কারাদণ্ড দেন।
ফ্লয়েডের প্রতি ‘সম্মান ও মর্যাদাহানিকর’ আচরণের কারণে এই সাজা দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।
বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করা ক্যাহিল বলেন, এই বিচার প্রক্রিয়াটি তাঁর কর্মজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। বিচার চলাকালীন সময়ে ব্যবহৃত তাঁর মাস্ক, পোশাক, নোট, ঘৃণা-চিঠির বাক্স এবং চশমা—এসব মিনেসোটা ঐতিহাসিক জাদুঘরে দান করেছেন তিনি।
তথ্য সূত্র: পিপল