বহু ভাষায় পারদর্শী: কিভাবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেলেন এই যুবক?

বহুভাষী প্রতিভার অধিকারী: ভাষা দিয়ে বিশ্ব জয় করা এক যুবকের গল্প। ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রায়ই দেখা যায় এক তরুণকে, যিনি পথচলতি মানুষের কাছে গিয়ে তাদের মাতৃভাষায় কথা বলছেন।

জাপানি-আইরিশ বংশোদ্ভূত এই যুবকের নাম ইউজি বেলেজা। বর্তমানে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়, কারণ তিনি বহু ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন। ভাষার প্রতি এই ভালোবাসাই তাকে এনে দিয়েছে বিশ্বজোড়া পরিচিতি।

ইউজির জন্ম জাপানে, বেড়ে ওঠা কিয়োটোতে। তার মা ছিলেন আইরিশ এবং বাবা জাপানি। ছোটবেলা থেকেই তিনি বহু সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। মা ইংরেজি, আইরিশ, জাপানি ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতেন।

এই মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাব ইউজির ওপর গভীর ভাবে পড়েছিল। ভাষার প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ।

স্কুলে তিনি ভালো ছাত্র ছিলেন, খেলাধুলাতেও তার আগ্রহ ছিল। কিন্তু মিশ্র সংস্কৃতির কারণে তিনি সবসময় নিজেকে কিছুটা আলাদা অনুভব করতেন।

কৈশোরে তিনি এক বছর আয়ারল্যান্ডে কাটান, মায়ের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য। সেখানেও তিনি নিজেকে পুরোপুরিভাবে আইরিশ হিসেবে পরিচয় দিতে পারেননি। এই সময়েই তিনি অন্যান্য ভাষা শিখতে আগ্রহী হন।

বিশেষ করে, অভিবাসীদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত রুশ ভাষা শেখার আগ্রহ তাকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করে।

ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ইউজি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। অনলাইন ভিডিও দেখা, বন্ধুদের সাথে অনুশীলন করা, ফোনে ভয়েস রেকর্ড শোনা এবং পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন তার অন্যতম উপায়। ভাষা শিক্ষার এই ধারাবাহিকতা তাকে জার্মানিতে মাস্টার্স করার সুযোগ এনে দেয়।

এরপর তিনি ভিয়েনায় পাড়ি জমান, যেখানে বিভিন্ন দেশের মানুষের বসবাস ছিল এবং তাদের সাথে মিশে তিনি আরও অনেক ভাষা চর্চা করার সুযোগ পান।

বর্তমানে ইউজি পাঁচটি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন – জাপানি, ইংরেজি, রুশ, জার্মান এবং তুর্কি। এছাড়াও, আরও ১০টির বেশি ভাষায় তার ভালো ধারণা রয়েছে এবং ৪০টির বেশি ভাষায় তিনি কিছু সাধারণ কথা বলতে পারেন।

ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারীর সংখ্যা ২৭ লক্ষ, টিকটকে ৩৬ লক্ষ এবং ইউটিউবে প্রায় ৪ লক্ষ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও তৈরি করে ইউজি দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন। শুরুতে তিনি তুর্কি ও জাপানি সংস্কৃতির মিশ্রণ নিয়ে মজার ভিডিও বানাতেন। পরে, দর্শকদের উৎসাহে তিনি কাজাখ ভাষায়ও ভিডিও তৈরি করতে শুরু করেন।

কাজাখ ভাষায় ভিডিও বানানোর কারণে তিনি কাজাখ পর্যটনের শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা বিষয়ক অ্যাপ, ফোন কোম্পানি এবং ডেন্টাল কেয়ারের মতো বিভিন্ন সংস্থা তার স্পনসর।

ইউজির মতে, ভাষা শুধু ব্যাকরণ বা শব্দভাণ্ডারের বিষয় নয়, বরং এটি সহানুভূতি এবং আনন্দের প্রকাশ। তার স্বপ্ন বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করা এবং ভাষার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্কৃতিকে তুলে ধরা।

বর্তমানে তিনি ‘জিরো টু ফ্লুয়েন্ট’ নামে একটি ভাষা শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছেন, যেখানে ভাষা শেখার মজাদার উপায়গুলো তুলে ধরা হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *