ডাক্তার, লেখক, এবং মানবিকতার পূজারী: হার্ভার্ডের সমাবর্তন বক্তৃতায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত আব্রাহাম ভার্গিস।
বিশ্বের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি – তিনি শুধু চিকিৎসক নন, একইসাথে খ্যাতিমান লেখক এবং শিক্ষকও। এই বিরল সম্মানের অধিকারী হচ্ছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ড. আব্রাহাম ভার্গিস।
তাঁর বক্তৃতার মূল বিষয়বস্তু হলো, প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানবিক স্পর্শের গুরুত্ব।
ড. ভার্গিসের জন্ম ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসী পিতামাতার ঘরে। তাঁর শৈশব কেটেছে আফ্রিকার এই দেশটিতে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর আগ্রহের শুরুটাও হয় এই সময়েই। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানকার বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেন।
এই অভিজ্ঞতা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, যা তাঁর চিকিৎসা এবং সাহিত্যচর্চায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
ডাক্তার হিসেবে রোগীদের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। রোগীদের প্রতি সহানুভূতি ও মনোযোগের মাধ্যমে কীভাবে তাদের আরোগ্য লাভের পথ সুগম করা যায়, সে বিষয়ে তিনি সবসময় গুরুত্ব দেন।
তিনি মনে করেন, শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের একটি নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়, যা রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদানের পাশাপাশি ড. ভার্গিস একজন জনপ্রিয় লেখক হিসেবেও পরিচিত। তাঁর লেখালেখির মূল বিষয়বস্তু হলো মানুষের জীবন এবং সম্পর্কের গভীরতা।
তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘কাটিং ফর স্টোন’, ‘দ্য কোভেন্যান্ট অফ ওয়াটার’।
তাঁর ‘মাই ওন কান্ট্রি: এ ডক্টরস স্টোরি’ বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২০১৪ সালের হাইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৫ সালের ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল।
২০২৩ সালে তিনি পেয়েছেন গুগেনহেইম ফেলোশিপ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ভার্গিসকে এই সম্মান জানানো হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশেষ করে, একাডেমিক স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তি সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলছে।
এমন একটি পরিস্থিতিতে ড. ভার্গিসের এই বক্তৃতা, নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে।
ড. আব্রাহাম ভার্গিসের ভাষণে, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মানবিকতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার উপর জোর দেওয়া হবে।
তাঁর মতে, প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, তবে রোগীর প্রতি সহানুভূতি, স্পর্শ এবং গভীর মনোযোগের বিকল্প নেই।
তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, সেখানে মানবিক সম্পর্কগুলো যেন দূরে সরে যাচ্ছে।
ড. ভার্গিসের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা, তাঁর চিকিৎসা জীবন, এবং সাহিত্যচর্চা – সবকিছুই যেন এক সূত্রে গাঁথা।
একজন চিকিৎসক, লেখক, এবং শিক্ষক হিসেবে, তিনি সবসময় মানুষের কাছাকাছি থাকতে চেয়েছেন।
হার্ভার্ডের সমাবর্তন বক্তৃতায় তাঁর এই আহ্বান, নিঃসন্দেহে তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন