বুুরুন্ডিতে খাদ্য সংকটে ভুগছেন কঙ্গোর শরণার্থীরা, সাহায্য হ্রাসের কারণে বাড়ছে দুর্ভোগ।
বুুরুন্ডির একটি শরণার্থী শিবিরে খাদ্য সংকটে দিন কাটাচ্ছেন কঙ্গো থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ। আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যাওয়ায় সেখানে খাদ্য ও নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তারা এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার নাগরিকরা জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশ বুুরুন্ডিতে পালিয়ে আসে। রুয়ান্ডা সমর্থিত এম২৩ গোষ্ঠীর অগ্রযাত্রার কারণে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পরে। উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ক্লদ (ছদ্মনাম) জানিয়েছেন, “এখানে আসার আগে মাসে সাড়ে তিন কেজি চাল পেতাম, এখন এক কেজি পাচ্ছি।
তিন কেজি মটরশুঁটির বদলে এখন ১.৮ কেজি পাই। টমেটো সস যা পাই, তা একদিনও টেকে না।”
শরণার্থী শিবিরগুলোতে খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। খাদ্য সংগ্রহের জন্য কিছু লোক অন্যদের তাঁবুতে হামলা চালাচ্ছে। ক্লদ আরও জানান, এই পরিস্থিতিতে অনেক অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
বর্তমানে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme) খাদ্য সরবরাহ অর্ধেক করে দিয়েছে। সাহায্য অব্যাহত রাখতে না পারলে নভেম্বরের মধ্যে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছে।
শরণার্থী শিবিরের ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অস্কার নিবিজি খাদ্য সরবরাহের এই অভাবকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, এর ফলে সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
শরণার্থীদের চাষাবাদের জন্য জমির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে তাদের জন্য বাইরের সাহায্য অপরিহার্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন সাহায্য বাজেট ৮০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোও অনুদান কমাচ্ছে। এর ফলে অনেক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা (এনজিও) তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বুুরুন্ডির মিশন প্রধান জিওফ্রে কিরেনগা বলেন, “কঙ্গোতে সহিংসতার মধ্যে এমন সাহায্য হ্রাস খুবই খারাপ একটা সময়ে হচ্ছে।”
জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি কঙ্গোলিজ শরণার্থী বুুরুন্ডিতে আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকেই সেখানে কয়েক হাজার শরণার্থী রয়েছে।
উদ্বাস্তুদের জন্য তৈরি করা মুসেনি শিবিরের ধারণক্ষমতা ১০ হাজার হলেও বর্তমানে সেখানে প্রায় দ্বিগুণ মানুষ বাস করছে। সাহায্য কমার কারণে যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের জন্য সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে বিভিন্ন এনজিও।
কিরেনগা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “খাদ্যাভাবে মৃত্যুর ঘটনা হয়তো অনিবার্য হয়ে উঠবে।”
জাতিসংঘের তথ্যমতে, খাদ্যের অভাবে অনেক কঙ্গোলিজ শরণার্থী জীবন বাজি রেখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে শরণার্থীদের এই দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা