গাজায় ইসরায়েলি হামলা: বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, ত্রাণ বিতরণে অনিশ্চয়তা!

গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত, মানবিক সহায়তা নিয়ে জটিলতা বাড়ছে।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা সোমবারও অব্যাহত ছিল, যাতে বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ঘুমন্ত মানুষও ছিল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা ওই স্কুলটিতে থাকা জঙ্গিদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল।

এদিকে, গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত একটি গ্রুপের প্রধান পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যেই তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে, হামাস হুঁশিয়ারি দিয়েছে, গাজার বাসিন্দারা যেন এই নতুন সহায়তা গ্রুপের সঙ্গে সহযোগিতা না করে। হামাসের দাবি, এই গ্রুপের মূল উদ্দেশ্য হলো গাজার জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া।

গত ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। ওই হামলায় প্রায় ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়।

এরপর ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৫৪,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তবে এই সংখ্যায় বেসামরিক ও যোদ্ধা – উভয়পক্ষের হতাহতের হিসাব রয়েছে।

গাজা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল এখনো হামাসকে নির্মূল করতে এবং অবরুদ্ধ গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামাসকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা পর্যন্ত তাদের এই অভিযান চলবে।

এখনো ৫৪ জন জিম্মি সেখানে রয়েছে, যাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ জীবিত আছে বলে ধারণা করা হয়।

অন্যদিকে, গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহ প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ রাখার পর গত সপ্তাহে সামান্য কিছু সহায়তা প্রবেশ করতে দেয় ইসরায়েল। বিশেষজ্ঞরা দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করার পর এবং মিত্র দেশগুলোর চাপ বৃদ্ধির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ইসরায়েলের দাবি, হামাস এই সহায়তা সরিয়ে নিচ্ছে। তবে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, সহায়তার উল্লেখযোগ্য কোনো ঘাটতি নেই।

এই পরিস্থিতিতে, গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ তাদের কার্যক্রম শুরু করতে প্রস্তুত। যদিও তাদের প্রধান পরিচালক পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে, জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের সাহায্য সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যালয়ে ইসরায়েলি বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়েছে।

জেরুজালেমের পরিস্থিতিও বেশ উত্তপ্ত। ইসরায়েলি তরুণ জাতীয়তাবাদীরা শহরের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে মিছিল করেছে। প্রতি বছর এই দিনে পূর্ব জেরুজালেম দখলের স্মরণে এই মিছিল বের করা হয়।

ফিলিস্তিনি দোকানদাররা দোকান বন্ধ করে দেয় এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এই মিছিল প্রায়ই সহিংস রূপ নেয়।

জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টাইনমায়ার সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, “বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যা করছে, তা আমি বুঝি না।”

অন্যদিকে, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বিতর্কিত একটি স্থানে ইহুদিদের প্রার্থনা করার অনুমতি দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি এবং মুসলিম বিশ্ব এই ধরনের পদক্ষেপকে উস্কানিমূলক হিসেবে বিবেচনা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টি নয়েম ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক জানাতে ইসরায়েল সফর করেছেন। নিহতদের মধ্যে একজন মার্কিন নাগরিক ছিলেন।

গাজা থেকে ছোড়া তিনটি রকেট ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে দুটি গাজার ভেতরে এবং একটি ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ গাজায় খাদ্য ও সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ইসরায়েলি পদক্ষেপকে ‘জঘন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “গাজায় যারা কষ্টে আছে, তাদের কাছে খাদ্য ও সরবরাহ পৌঁছাতে না দেওয়াটা অত্যন্ত নিন্দনীয়।”

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *