বালামোরির জন্মকথা: কিভাবে তৈরি হয়েছিল শিশুদের স্বপ্নের জগৎ?

ছোটদের পছন্দের টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘বালামোরি’ – সাফল্যের এক অন্য গল্প

ছোটদের জন্য তৈরি হওয়া একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান, ‘বালামোরি’। এর নির্মাতা ব্রায়ান জেমিসন।

এই অনুষ্ঠানের সাফল্যের পেছনে ছিল এক দারুণ গল্প, যা সম্প্রতি জানা গেছে। অনুষ্ঠানটি তৈরির পেছনের কথা বলেছেন ব্রায়ান জেমিসন এবং অভিনেত্রী কিম টসারকেজি।

ব্রায়ান জেমিসন জানান, তিনি যখন ‘প্লে স্কুল’ দেখতেন, তখন তাঁর মনে হয়েছিল, তিনিও এর উপস্থাপক হতে পারেন।

এরপর তিনি বিবিসি’র মাধ্যমে প্রি-স্কুল ডিরেক্টর হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন এবং ফ্রিল্যান্স পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তাঁর মাথায় আসে শিশুদের জন্য একটি নাটক বানানোর কথা, যেখানে সমাজের গল্প থাকবে। এরপর বিবিসি’র সিবিবিজ (CBeebies) চ্যানেল তৈরি হওয়ার পর, তারা এমন একটি অনুষ্ঠান খুঁজছিল, যা শিশুদের চারপাশের জগৎ সম্পর্কে ধারণা দেবে।

ব্রায়ান জেমিসন তাঁর আইডিয়া নিয়ে হাজির হন এবং তাঁর এই ধারণাটি পছন্দ হয়।

অনুষ্ঠানটির শুটিংয়ের জন্য প্রথমে স্কটল্যান্ডের কার্কুডব্রাইট-এ যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরে গ্লাসগো থেকে এর দূরত্ব বেশি হওয়ায়, তারা মাল দ্বীপপুঞ্জের টোবারমোরিতে (Tobermory) যান।

এখানকার রঙিন বাড়িঘর, পাহাড় আর জল শিশুদের খুবই পছন্দের ছিল। ব্রায়ান জেমিসন এই অনুষ্ঠানের জন্য একটি থিম সং তৈরি করেছিলেন – ‘হোয়াটস দ্য স্টোরি ইন টোবারমোরি?’

কিন্তু পরে জানা যায়, ‘টোবারমোরি’ নামে আগে থেকেই একটি শব্দ প্রচলিত ছিল, তাই পরে এর নাম পরিবর্তন করে ‘বালামোরি’ রাখা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘মিস হুলি’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এমন একজনকে খুঁজছিলেন, যিনি শিশুদের স্বপ্নের শিক্ষিকা হতে পারবেন।

প্রথমে ‘চিটি চিটি ব্যাং ব্যাং’ ছবিতে অভিনয় করা অভিনেতা লিওনেল জেফ্রিসকে নির্বাচন করার কথা ভাবা হয়েছিল, কিন্তু পরে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।

অবশেষে মেরি রিগানসকে ‘সুজি সুইট’ চরিত্রে নির্বাচন করা হয়।

গ্লাসগোর বার্মালোক-এ (Barmulloch) তৈরি করা হয়েছিল একটি স্কুল, যেখানে বাচ্চারা আসত এবং নিজেদের স্কুল হিসেবেই সেটি অনুভব করত।

অনুষ্ঠানটি শুধু শিশুদের জন্য ছিল না, বরং এটি ছিল একটি সম্মিলিত অভিজ্ঞতা।

এর চরিত্রগুলো এতটাই আকর্ষণীয় ছিল যে, সবাই তাদের পছন্দ করত।

স্কুলের বাসচালক ‘এডি ম্যাকক্রেডি’ এবং গ্রামের দোকান ও ক্যাফের মালিক ‘সুজি সুইট’-এর মধ্যে সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ।

আবার ‘মিস হুলি’ ও ‘পিসি প্লুম’-এর মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল।

এই চরিত্রগুলোর বিভিন্নতা দর্শকদের কাছে তাদের আরও বেশি আপন করে তুলেছিল।

অনুষ্ঠানে ‘পেনি পকেট’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিম টসারকেজি।

তিনি জন্ম থেকেই স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি (spinal muscular atrophy) নামক একটি রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

কিম জানান, তাঁর হুইল চেয়ারটিকে অনেকে অভিনয়ের অংশ হিসেবে দেখতেন।

এই চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি পরিচিতি পান এবং দর্শকদের মন জয় করেন।

তিনি বলেন, ‘বালামোরি’র কাজ ছিল আনন্দের।

এখানে দারুণ একটি শিল্পী দল ও কলাকুশলী ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, এর শিল্পীরা বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিতেন।

একবার জনপ্রিয় শিল্পী সোফি এলিস-বেক্সটর এসেছিলেন এই অনুষ্ঠানে এবং ‘পেনি’র র‍্যাপ গানটি শুনে খুব পছন্দ করেছিলেন।

কিম টসারকেজি আরও জানান, যখন তিনি নিউক্যাসল ইউনাইটেড ফুটবল দলের খেলা দেখতে গিয়েছিলেন, তখন হাজার হাজার দর্শক তাঁকে দেখে ‘হোয়াটস দ্য স্টোরি?’ গানটি গেয়ে ওঠেন।

বাচ্চাদের জন্য তৈরি হলেও, ‘বালামোরি’ আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে।

এর কারণ, এর গল্প বলার ধরন, চরিত্রগুলোর আকর্ষণীয়তা এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি।

এই অনুষ্ঠানটি প্রমাণ করে, ভালো মানের কনটেন্ট তৈরি করা গেলে তা সব বয়সের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *