গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের কারণে সেখানকার কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টারের (UNOSAT) এক যৌথ মূল্যায়নে উঠে এসেছে, গাজার শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি কৃষি জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে, যা সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করছে।
ফসল জমির ক্ষতির চিত্রটি ভয়াবহ। মূল্যায়নে দেখা গেছে, গাজার মোট জমির প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭৭.৮ শতাংশ জমি বর্তমানে কৃষকদের জন্য সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারের অযোগ্য।
মাত্র ৪.৬ শতাংশ, অর্থাৎ ৬৮৮ হেক্টরের মতো জমিতে বর্তমানে চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। গাজার গ্রিনহাউস এবং সেচের জন্য ব্যবহৃত পানির উৎসগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেখানকার ৭১.২ শতাংশ গ্রিনহাউস এবং ৮২.৮ শতাংশ কৃষি কুয়ো হয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, না হয় ধ্বংস হয়ে গেছে।
এফএও-এর ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল বেথ বেচডল এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই ধ্বংসযজ্ঞ কেবল অবকাঠামোর ক্ষতি নয়, এটি গাজার কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার এবং জীবনযাত্রার ভিত্তিগুলোর সম্পূর্ণ পতন।”
একসময় যা হাজার হাজার মানুষের খাদ্য, আয় এবং স্থিতিশীলতা এনেছিল, আজ তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কৃষি জমি, গ্রিনহাউস এবং কুয়ো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশাল বিনিয়োগ এবং জীবন ও জীবিকা পুনরুদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার প্রয়োজন।
জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি)-এর বিশ্লেষণ অনুসারে, গাজার পুরো জনসংখ্যা বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধ, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর বিধিনিষেধের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও ইসরায়েল সম্প্রতি গাজায় ‘ন্যূনতম’ ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে, মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে সীমিত ত্রাণ সেখানকার ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় প্রতিদিন বহু ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে। সোমবার গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনী একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর বোমা হামলা চালায়, এতে আগুন লেগে অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও ছিল।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ওই দিন ভোর থেকে চালানো হামলায় গাজাজুড়ে ৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা