বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে টিভি শো’গুলোতে টেক্সট মেসেজের দিকে মনোযোগ
বর্তমানে টেলিভিশন দর্শকদের রুচি এবং আগ্রহ দুটোই বেড়েছে।
তাই নির্মাতারাও তাদের কাজ আরো খুঁটিয়ে দেখছেন। টিভি শো’গুলোতে এখন টেক্সট মেসেজের দৃশ্যগুলো আরো বেশি মনোযোগ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। আগেকার দিনে, এইসব দৃশ্যে টেক্সট হিস্টরি বা মেসেজের ইতিহাস তেমন একটা দেখা যেত না।
একটি মেসেজ দেখা গেলে, সেটিই ছিলো যথেষ্ট। কিন্তু এখনকার সময়ে নির্মাতারা চেষ্টা করেন, টেক্সট আদান-প্রদানের দৃশ্যগুলো আরো বাস্তবসম্মত করতে।
বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে গেলে, শুরুতে আসা যাক পুরনো দিনের কিছু টিভি সিরিজের কথায়। যেমন ধরুন, ‘টেড লাসো’ সিরিজের কথা। এই সিরিজে দেখা যায়, টেড নামের প্রধান চরিত্রটি তার প্রাক্তন স্ত্রীকে একটি মেসেজ পাঠাচ্ছে, যেখানে লেখা ছিল, “নক নক”।
এখানে তেমন কোনো অস্বাভাবিকতা নেই, তবে সমস্যা হলো, টেড সম্ভবত এই প্রথম তার প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে টেক্সট মেসেজে কথা বলছে! তাদের মধ্যে কোনো মেসেজিং হিস্টরিও নেই।
এমনকি, ‘এমিলি ইন প্যারিস’ কিংবা ‘ক্রেজি এক্স-গার্লফ্রেন্ড’-এর মতো জনপ্রিয় সিরিজেও একই ধরনের ভুল দেখা গেছে। চরিত্রদের মধ্যে টেক্সট মেসেজের কোনো ধারাবাহিকতা ছিলো না। বিষয়টি নিয়ে ২০১৬ সালে ওয়্যার্ড পত্রিকার সাংবাদিক যাক জ্যাসন বেশ কিছু টিভি শো’য়ের উদাহরণ দিয়ে লেখেন, যেখানে টেক্সট হিস্টরি ছিলো না।
তাঁর মতে, এটি “মার্জনীয় নয় এবং উদ্বেগের বিষয়”।
তবে, নির্মাতারাও যে বিষয়টি খেয়াল করেছেন, তা বলাই বাহুল্য। কারণ, এখনকার টিভি শো’গুলোতে একটি চরিত্রের টেক্সট মেসেজের ইতিহাস সঠিক দেখানোর জন্য অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। একটি দৃশ্যে হয়তো কয়েক সেকেন্ডের জন্য টেক্সট মেসেজ দেখা যায়, তবুও সেটিকে নিখুঁত করার চেষ্টা করা হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গ্রাফিক ডিজাইন ফার্ম ‘মডার্ন মোশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ডেভ হেনরি বলেন, “টেক্সট হিস্টরি না থাকলে আমাদের সবার খুব খারাপ লাগে। আমরা বছরের পর বছর ধরে এর জন্য চেষ্টা করছি।” তাঁদের তৈরি করা ‘ম্যাজিক ফোন’ নামের একটি সফটওয়্যার আছে, যা সেটে থাকা ফোনের পর্দায় ইনস্টল করা হয়।
এই অ্যাপের সঙ্গে ব্লুটুথ কিবোর্ড যুক্ত থাকে, যা অভিনেতা বা কলাকুশলীদের জন্য টেক্সট মেসেজ পাঠানো বা টাইপ করার সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়।
‘ম্যাজিক ফোন’ ব্যবহার করে, নির্মাতারা টেক্সট মেসেজের ইতিহাস তৈরি করতে পারেন, যা সময় এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। ‘দ্য মর্নিং শো’, ‘শ্রিংকিং’ এবং ‘টেড লাসো’-এর মতো জনপ্রিয় টিভি শো’গুলোতেও এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ‘মডার্ন মোশন’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস কান্ডে বলেন, “স্টুডিও এবং ক্রিয়েটিভ টিম এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে যে, আমরা এখন এইসব ডিভাইস দেখতে অভ্যস্ত। তাই, যদি টেক্সট মেসেজগুলো সঠিক না দেখায়, তবে দর্শক এতে বিরক্ত হবে।”
‘টেড লাসো’-এর তৃতীয় সিজনে টেডের টেক্সট মেসেজের ইতিহাস তৈরি করার জন্য ‘মডার্ন মোশন’-এর কর্মী রব রজার্স-কে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বার গ্রাফিক্সের পরিবর্তন করতে হয়েছিল। তিনি জানান, নির্মাতারা, পরিচালক এবং অন্যান্য কলাকুশলীদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁরা নিশ্চিত করেছেন যে টেড তার মায়ের সঙ্গে কেমন কথা বলত অথবা তিন মাস আগে ডাক্তারের সঙ্গে তার কী কথা হয়েছিল।
এমনকি, শো প্রচারের পরেও কিছু গ্রাফিক্স পরিবর্তন করা হয়েছিল, যাতে পরবর্তীতে যারা এটি দেখছেন, তাঁদের বুঝতে সুবিধা হয়।
একটি সাধারণ টেক্সট মেসেজ তৈরি করতেও ১৩ থেকে ১৪ বার পরিবর্তন করতে হয়। একটি চরিত্রের ফোনে কার নাম কী, প্রোফাইল ছবি কেমন, অথবা তারা একে অপরের সঙ্গে কতটা পরিচিত—এসব বিষয়ও খেয়াল রাখতে হয়।
আরেকজন স্ক্রিপ্ট সম্পাদক, চার্লি নিয়েল ‘দ্য স্টোলেন গার্ল’ তৈরি করার সময় এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দেন। গল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টেক্সট মেসেজগুলো প্রধান লেখকরা লিখতেন, কিন্তু মেসেজগুলোর ইতিহাস তৈরি করার কাজটি তিনি করতেন। তিনি তাঁর বাস্তব জীবনের টেক্সট মেসেজ থেকে ধারণা নিতেন।
উদাহরণস্বরূপ, তিনি তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে কফি খাওয়ার কথা জানানোর জন্য কেমন মেসেজ করতেন, সেই ধরনের মেসেজ তৈরি করতেন।
সবশেষে, টেক্সট মেসেজের ইতিহাস একটি টিভি শো তৈরি বা ভাঙতে পারে না, তবে এটি দর্শকদের ভালো লাগে। চার্লি নিয়েল বলেন, “টিভি দর্শকরা এখন অনেক বেশি সচেতন। তাই, যদি কোনো মেসেজ ভুলভাবে দেখানো হয়, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে তা ধরে ফেলেন।”
বর্তমানে, যদি কোনো চরিত্রে টেক্সট মেসেজের ইতিহাস দেখা না যায়, তবে ধরে নিতে হবে, সেটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। কান্ডের মতে, যখন একটি টাইপিং বাবল আসে এবং আবার চলে যায়, তখন এটি কোনো অমীমাংসিত বিষয়ের প্রতীক হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান