টম ক্রুজের মতো খ্যাতিমান অভিনেতার সিনেমা মানেই যেন অ্যাকশন আর শ্বাসরুদ্ধকর সব দৃশ্য। পর্দায় তার অভিনয় দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে, কারণ তিনি ঝুঁকি নিতে ভালোবাসেন।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘মিশন ইম্পসিবল’ সিরিজের নতুন ছবিতেও (Mission: Impossible – Dead Reckoning Part One) তিনি এমন কিছু দৃশ্যে অভিনয় করেছেন যা দেখে দর্শক হিসেবে আমরা হতবাক হয়ে যাই। গভীর সমুদ্রের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তিনি, আবার উড়ন্ত বিমানের পাখনায় ঝুলে থাকার মতো বিপজ্জনক স্ট্যান্টও করেছেন, যা করতে গিয়ে তিনি নাকি কয়েকবার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন।
আসলে, টম ক্রুজ-এর এই ডেয়ারিং (daring) মনোভাবের কারণ কি? তিনি কি কেবল দর্শকদের আনন্দ দিতে চান, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে?
হলিউডের সিনেমায় এত উন্নত প্রযুক্তি আসার পরও কেন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এইসব দৃশ্যে অভিনয় করেন? সমালোচকদের মতে, এর কারণ একটাই – দর্শকদের আকর্ষণ করা। কারণ অ্যাকশন দৃশ্যের জন্য তিনি যে শারীরিক কসরত করেন, তা দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
তবে, প্রযুক্তির এই যুগে যেখানে গ্রিন স্ক্রিন (green screen) ব্যবহার করে সহজেই অনেক কঠিন দৃশ্য ধারণ করা যায়, সেখানে টম ক্রুজের এই ঝুঁকি নেওয়ার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি? বর্তমান সিনেমা জগতে, বিশেষ করে হলিউডে, এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছড়াছড়ি।
কম্পিউটার গ্রাফিক্স (CGI) ব্যবহার করে খুব সহজেই এমন সব দৃশ্য তৈরি করা সম্ভব, যা দর্শকদের কল্পনার জগতকে আরও বিস্তৃত করে। তাহলে কেন এই ঝুঁকি?
কেউ কেউ মনে করেন, টম ক্রুজের এই ধরনের ডেয়ারিং কাজ সিনেমার ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাঁর এই ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা দর্শকদের সিনেমা হলে যেতে উৎসাহিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, পুরনো দিনের সিনেমাগুলোতেও এমন অনেক অভিনেতা ছিলেন, যারা নিজেদের স্টান্ট নিজেরাই করতেন। বাস্টার কীটনের (Buster Keaton) কথা ধরুন, তিনি নির্বাক ছবিতে (silent film) অভিনয় করতেন এবং তার স্টান্টগুলো ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
আবার, চার্লি চ্যাপলিন (Charlie Chaplin) তার ‘মডার্ন টাইমস’ ছবিতে (Modern Times) একটি দৃশ্যে এমনভাবে অভিনয় করেছেন, যেখানে তিনি অল্পের জন্য বড় একটি গর্তে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পান।
তবে, অনেক দর্শক মনে করেন, টম ক্রুজের বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নির্ভর সিনেমাগুলো, যেমন ‘মাইনরিটি রিপোর্ট’ (Minority Report) বা ‘ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস’ (War of the Worlds)-এর মতো ছবিগুলো, মিশন ইম্পসিবলের চেয়ে বেশি উপভোগ্য।
কারণ, এইসব ছবিতে গল্পের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয় এবং অভিনেতাদের অভিনয় দর্শককে আকৃষ্ট করে। সেখানে শারীরিক কসরতের চেয়ে অভিনয়ের দক্ষতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে প্রশ্ন হলো, টম ক্রুজের এই শারীরিক সক্ষমতা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার বিষয়টি কি সত্যিই সিনেমার জন্য জরুরি? নাকি প্রযুক্তির এই যুগে, ভালো গল্পের সাথে অভিনয় দক্ষতা থাকলেই একটি সিনেমা দর্শকদের মন জয় করতে পারে?
তথ্য সূত্র: পিপল