ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা এই বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার তারা ছাড়তে নারাজ।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের পুরনো অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই সিএনএনকে জানান, পরমাণু কর্মসূচিকে যদি অস্ত্র তৈরির দিকে যাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়, তাহলে “আমরা অবশ্যই সেটি করতে পারি।”
তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি কিভাবে সমঝোতা হতে পারে। বাঘেই আরও বলেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তি ব্যবহারের অধিকার অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
শুক্রবার ইতালির রোমে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনা হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার নিউ জার্সিতে সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল এবং আজ ইরানের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো আলোচনা হয়েছে এবং দেখা যাক কি হয়।
আমার মনে হয় ইরান ইস্যুতে আমরা কিছু ভালো খবর পেতে পারি।”
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এই আলোচনাকে “আলোচনার সবচেয়ে পেশাদার রাউন্ডগুলির মধ্যে একটি” হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে তিনি বলেন, মূল বিষয়গুলো “দুই বা তিনটি বৈঠকে সমাধান করার মতো যথেষ্ট সহজ নয়।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই তেহরানকে সব ধরনের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
কারণ, এটি বেসামরিক এবং সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাঘেইয়ের মতে, আলোচনায় মার্কিন আলোচকদের আচরণে কিছুটা নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সম্প্রতি জানান, গত তিন মাসে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
তিনি বলেন, “ইরান একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন দেশ, যারা এই পর্যায়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা আমার জন্য উদ্বেগের কারণ।”
আলোচনার অগ্রগতির মাঝে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি শুক্রবারের আলোচনার আগে মার্কিন আলোচকদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেন।
তিনি তাদের “অযৌক্তিক কথা” না বলার আহ্বান জানান।
তবে বাঘেই যুক্তরাষ্ট্র-ইরান চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী।
তিনি উভয় পক্ষের জন্য একটি “win-win” পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “যদি সত্যিই ইচ্ছা থাকে, তবে অনেক পথ আছে।”
এই আলোচনার মধ্যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র নতুন কিছু গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে, যেখানে ধারণা করা হচ্ছে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাঘেই বলেন, ইরানের উপর কোনো ধরনের চাপ তারা সহ্য করবে না।
পরমাণু ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হলে তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে।
এর প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতি এবং জ্বালানি বাজারেও।
বাংলাদেশের মতো দেশ, যারা জ্বালানির জন্য আমদানি নির্ভর, তাদের জন্যেও এটি তাৎপর্যপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: সিএনএন