আতঙ্কে ইউক্রেন! গ্রামগুলো দখল করে রাশিয়ার ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ

ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলের চারটি গ্রাম দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।

এর কয়েক দিন আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সীমান্ত বরাবর একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করার নির্দেশ দেন।

গত বছর ইউক্রেনীয় বাহিনীর আকস্মিক হামলায় রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলের একটি অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়ার ভূখণ্ড অন্য কোনো দেশ দখল করে।

পুতিনের মতে, ইউক্রেনের এই ধরনের হামলা রুখতে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা প্রয়োজন।

অন্যদিকে, সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে রাশিয়ার বোমা হামলা বেড়ে গেলেও, মঙ্গলবার তা কিছুটা কমে এসেছে। তবে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা চললেও, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত কিথ কেলগ জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এখনো পর্যন্ত একটি প্রস্তাবিত স্মারকপত্র দেননি। ১৯ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে পুতিন শান্তি চুক্তির কাঠামো নিয়ে একটি রূপরেখা দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, তারা ভ্যাটিকানে আলোচনার জন্য রাজি নয়। কেলগ ফক্স নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, “আমরা ভ্যাটিকানে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম এবং সে বিষয়ে প্রস্তুতিও ছিল, কিন্তু রাশিয়া সেখানে যেতে রাজি নয়। সম্ভবত জেনেভা হতে পারে পরবর্তী গন্তব্য।”

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানিয়েছেন, তার দেশও শান্তি আলোচনার পরবর্তী রাউন্ড আয়োজনে প্রস্তুত।

শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনে প্রায় ৯০০ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। রবিবার রাতে চালানো হয় গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা, যেখানে ৩৫৫টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়।

ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাশিয়া ৬০টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা সাতটি রুশ অঞ্চলে ৯৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

সাপ্তাহিক বোমা হামলার তীব্রতা বাড়ায় ট্রাম্প পুতিনের সমালোচনা করে বলেন, তিনি ‘পাগলামি’ করছেন। এর জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ঘটনার প্রতি ‘আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

তবে মঙ্গলবার তিনি কিছুটা নরম সুরে কথা বলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, “আমেরিকান এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ ভারসাম্যপূর্ণ একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন।”

অন্যদিকে, ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, পুতিন ‘আগুন নিয়ে খেলছেন’।

সুমি অঞ্চলের সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলেহ হারিহোরভ জানিয়েছেন, গ্রামগুলো দখলের পর রুশ বাহিনী আরও গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

ইউক্রেনীয় বাহিনী তাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে এবং গ্রামবাসীদের আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষের তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

পুতিন গত সপ্তাহে কুরস্ক অঞ্চল পরিদর্শন করেন। গত মাসে রাশিয়া দাবি করেছিল, তারা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ওই এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছে, যেখানে গত বছর তারা কিছু ভূখণ্ড দখল করেছিল। যদিও কিয়েভ তা অস্বীকার করেছে।

পুতিনের মতে, দীর্ঘ সীমান্ত এখনো ইউক্রেনের হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি রুশ সামরিক বাহিনীকে সীমান্ত বরাবর একটি ‘নিরাপত্তা বেষ্টনী’ তৈরি করতে বলেছেন, তবে এই বেষ্টনী কোথায় তৈরি হবে বা এর বিস্তৃতি কতটুকু হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *