চীনের রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ৫!

চীনের একটি রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এতে অন্তত ৫ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছেন। চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শানডং প্রদেশের ওয়েইফাং শহরে অবস্থিত গাওমি ইউদাও কেমিক্যাল কোং-এর কারখানায় মঙ্গলবার এই বিস্ফোরণ হয়।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এখনো ৬ জন কর্মীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

বিস্ফোরণের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, কারখানা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গুদামের জানালা পর্যন্ত ভেঙে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের সময় তাদের বাড়ি পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল। এছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে।

গাওমি ইউদাও কেমিক্যাল কোং-এর কারখানায় কীটনাশক এবং চিকিৎসা বিষয়ক রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি করা হতো। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখানে ৫০০ জনের বেশি কর্মী কাজ করতেন।

ঘটনার পর স্থানীয় দমকলকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন জানিয়েছে, প্রায় ২৩০ জন দমকলকর্মী সেখানে কাজ করেছেন।

বিস্ফোরণের সময় কারখানা থেকে প্রায় ১০০০ গজ দূরে থাকা একটি স্কুলের এক শিক্ষার্থী জানায়, তারা প্রথমে একটি বিকট শব্দ শুনতে পায় এবং এরপর কারখানা থেকে হলুদ রঙের ধোঁয়া উঠতে দেখে, যার মধ্যে লাল আভা ছিল।

এছাড়াও, তারা একটি অদ্ভুত গন্ধ অনুভব করে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরতে বলে এবং তা না খোলার জন্য নির্দেশ দেয়।

স্থানীয় পরিবেশ ব্যুরোর এক কর্মকর্তা জানান, তারা দূষণ পরীক্ষার জন্য একটি দল ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন। তবে, তাদের প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে, চীনের জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় রাসায়নিক শিল্পে ঝুঁকি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল। যেখানে রাসায়নিক শিল্প পার্কগুলোতে কর্মকর্তাদের ‘বিপজ্জনক রাসায়নিক ব্যবস্থাপনার’ ক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।

গত বছর, এই কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি অন্তত দুবার চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কর্মীদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করা হয়েছিল।

জানা গেছে, কারখানার পার্টি সদস্যরা শুধুমাত্র ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে ৮০০-এর বেশি নিরাপত্তা ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সমাধান করেছেন।

চীনের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, এটি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রায় ২১,৮০০টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৯,৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অতীতেও চীনে এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে তিয়ানজিনে একটি গুদামে রাসায়নিক দ্রব্য মজুত করার সময় আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়, যেখানে ১৭৩ জন নিহত বা নিখোঁজ হয়েছিলেন।

এছাড়া, ২০১৯ সালে চীনের জিয়াংসু প্রদেশের ইয়ানচেং-এ একটি রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে ৭৮ জন নিহত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশেও অতীতে বিভিন্ন সময়ে কারখানা ও শিল্প-কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা শ্রমিক নিরাপত্তা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্বের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে।

এই প্রেক্ষাপটে, চীনের এই ঘটনা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যা শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার মনে করিয়ে দেয়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *