মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিমালায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আবেদন, অভিবাসীদের নিজ দেশ কিংবা তাদের আইনি অধিকার রয়েছে এমন কোনো দেশে ফেরত না পাঠিয়ে, তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াটি যেন সহজ করা যায়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে দক্ষিণ সুদানসহ অন্যান্য দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের বিতাড়িত করার পথ সুগম হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ অভিবাসন সংক্রান্ত বিতর্কিত নীতিরই ধারাবাহিকতা।
অভিযোগ উঠেছে, অভিবাসীদের বিতাড়নের আগে তাদের কোনো বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি, বিতাড়িত করার আগে তারা যে নির্যাতনের শিকার হতে পারেন, সেই বিষয়েও তাদের কোনো সতর্ক করা হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে আদালতে বিচারকের বক্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিচারক ব্রায়ান মারফি, যিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিয়োগপ্রাপ্ত, এই নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করছে যেখানে অভিবাসীদের জন্য চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
মারফি মনে করেন, কোনো ব্যক্তির নিজের দেশে অথবা যেখানে তার বসবাসের অধিকার আছে, সেখানে ফেরত না পাঠিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর আগে অভিবাসীদের লিখিতভাবে জানাতে হবে এবং তাদের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দিতে হবে।
আদালতে শুনানিতে বিচারক মারফি স্পষ্ট করে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ সুদানে বিতাড়নের চেষ্টা করে আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে। কারণ, বিতাড়িত করার আগে তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করার বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয়নি।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এখন থেকে অভিবাসীদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর বিষয়ে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগে জানাতে হবে। সেই সময়সীমার মধ্যে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানাতে পারবেন।
যারা ‘যুক্তিসঙ্গত ভীতি’ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হবেন, তাদের বিতাড়ন চ্যালেঞ্জ করার জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন বিচারকের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছে, এর ফলে তাদের পক্ষে ‘অপরাধী অভিবাসীদের’ বিতাড়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তারা আরও যুক্তি দেখিয়েছে, তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর আগে তারা ইতোমধ্যে সেই দেশের সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চিত করেন যে বিতাড়িত ব্যক্তিরা সেখানে কোনো প্রকার নির্যাতনের শিকার হবেন না। সম্প্রতি, একটি আপিল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতির ওপর স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে।
এর মধ্যেই খবর পাওয়া যাচ্ছে, অভিবাসীদের লিবিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। লিবিয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত। এমন পরিস্থিতিতে আদালত এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছানোর পরে, অভিবাসন নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো নতুন করে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকারকে খর্ব করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন