পশ্চিম তীরে গাজাকেন্দ্রিক ধ্বংসযজ্ঞ! ইসরায়েলের নতুন কৌশলে উদ্বাস্তু শিবিরে আতঙ্ক

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান: গাজায় ব্যবহৃত কৌশল, উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ধ্বংসাত্মক কৌশলগুলো এবার অধিকৃত পশ্চিম তীরেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ‘ফোরেনসিক আর্কিটেকচার’-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

তাদের ভাষ্যমতে, ইসরায়েল সেখানে একটি ‘স্প্যাটিয়াল কন্ট্রোল’ ব্যবস্থা তৈরি করছে, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সামরিক কার্যক্রম চালানো সহজ হবে।

প্রতিবেদনটিতে বিশেষভাবে উত্তরপশ্চিম পশ্চিম তীরে অবস্থিত জেনিন, ফারা, নুর শামস এবং তুলকারেম শরণার্থী শিবিরগুলোতে ইসরায়েলি কার্যক্রমের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। গবেষকরা প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি, স্যাটেলাইট চিত্র এবং অসংখ্য ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, গাজার মতোই শরণার্থী শিবিরগুলোতে সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করছে ইসরায়েল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সামরিক যান চলাচলের সুবিধার জন্য বিদ্যমান রাস্তাগুলো আরও প্রশস্ত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ঘরবাড়ি, বাগান এবং অন্যান্য স্থাপনা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। জেনিন শরণার্থী শিবিরে এই কৌশল স্পষ্টভাবে দেখা গেছে এবং নুর শামস ও তুলকারেম শরণার্থী শিবিরেও একই ধরনের কার্যক্রম চলছে।

ইসরায়েলের মন্ত্রীরা এর আগে ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁরা পশ্চিম তীরে গাজায় ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোই প্রয়োগ করবেন। তাদের এই পরিকল্পনার কারণে ইতোমধ্যে ৪০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে বসবাস করা প্রায় ৭৫,০০০ মানুষের জীবন এখন চরম ঝুঁকির মুখে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং জরুরি পরিষেবা কেন্দ্রগুলো।

অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, হাসপাতালের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং চিকিৎসা কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এমনকি হাসপাতালগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদের কেন্দ্রে পরিণত করারও অভিযোগ উঠেছে।

লুক্সেমবার্গ-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক হামজা আত্তারের মতে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এই ধরনের কৌশল নতুন নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রথম এর ব্যবহার শুরু হয়েছিল।

এটি মূলত বিদ্রোহ দমনের একটি অংশ ছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর বাসিন্দারা যখন নিজেদের বাড়িতে ফিরতে চেষ্টা করে, তখনও তাদের বাধা দেওয়া হয়।

ফোরেনসিক আর্কিটেকচারের গবেষকরা বলছেন, গাজায় চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর ওপর ইসরায়েলি হামলাগুলো পশ্চিম তীরেও বিস্তৃত হয়েছে। সেখানে হাসপাতালগুলোতে অবরোধ সৃষ্টি করা হচ্ছে, আহত বেসামরিক নাগরিকদের কাছে অ্যাম্বুলেন্সের প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং চিকিৎসা কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপগুলো ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার একটি সুপরিকল্পিত অংশ। এর মাধ্যমে তারা ওই এলাকাগুলোতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *