ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী’র একটি ‘আচমকা ধাক্কা’ দেওয়ার দৃশ্য, যা ফ্রান্সে তেমন গুরুত্ব পায়নি।
সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে, যেখানে দেখা যায় ভিয়েতনামে এক সফরের সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ’র স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রঁ, প্রেসিডেন্টের মুখমন্ডলে যেন ধাক্কা মারছেন। এই ঘটনাটি পশ্চিমা বিশ্বে আলোচনার জন্ম দিলেও, ফ্রান্সের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ফরাসি মিডিয়া এই বিষয়ে নীরবতা পালন করে, যা ফ্রান্সে রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রচলিত একটি সংস্কৃতির প্রতিফলন।
ফরাসি সংস্কৃতিতে, রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত জীবন সাধারণত জনসাধারণের আলোচনার বিষয় নয়। অতীতেও এমনটা দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতারাঁ’র অবৈধ কন্যার বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয়েছিল।
এমনকি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক প্রধান ডমিনিক স্ত্রস-কান এর যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনাও সেভাবে আলোচিত হয়নি, যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ওপর প্রভাব ফেলেছিল।
২০১৪ সালে, ক্লজার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ, মোটরসাইকেলের হেলমেট পরে এক বন্ধুর অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করছেন, যেখানে তিনি অভিনেত্রী জুলি গায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। যদিও ওলাঁদ তখনও বিবাহিত ছিলেন, এবং তার স্ত্রী ভ্যালেরি ট্রিয়েরউইলার ছিলেন।
ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা হলেও, ওলাঁদের দপ্তর এটিকে “ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন” হিসেবে অভিহিত করে এবং মিডিয়া দ্রুত পিছু হটে।
ম্যাক্রঁ-দম্পতির ঘটনার ক্ষেত্রেও একই ধরনের সংস্কৃতি দেখা গেছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর, ফরাসি গণমাধ্যমগুলো দ্রুত এর ওপর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানায় এবং পরে তা নিয়ে আলোচনা বন্ধ করে দেয়।
তবে, বর্তমানে এই সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ভুয়া খবরের বিস্তার এই ধরনের ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণে আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন করে তুলেছে। সম্প্রতি, রক্ষণশীল ভাষ্যকার ক্যান্ডিস ওউয়েন্স, ব্রিজিত ম্যাক্রঁকে নিয়ে একটি ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
এমনকী, প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁকে পর্যন্ত এই বিষয়ে মুখ খুলতে হয়েছে।
ম্যাক্রঁ এবং ব্রিজিতের সম্পর্কও বেশ ব্যতিক্রমী। তারা প্রথম পরিচিত হন, যখন ম্যাক্রঁ’র বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর এবং ব্রিজিত ছিলেন তার স্কুলের শিক্ষক।
তাদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল ২৪ বছর। এই সম্পর্ক একসময় গভীর হয় এবং ম্যাক্রঁ ঘোষণা করেন যে, তিনি ব্রিজিতকে বিয়ে করবেন।
২০১৭ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তাদের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তারা তাদের বিবাহিত জীবনকে একটি আধুনিক, ভালোবাসাপূর্ণ পরিবারের উদযাপন হিসেবে উপস্থাপন করেন। সমালোচকদেরকে ‘নারীবিদ্বেষী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বর্তমানে, জনসাধারণের মধ্যে তাদের সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে এবং মিডিয়াতেও বিষয়টি আলোচনার বিষয় হচ্ছে। তবে, ফ্রান্সের এই সংস্কৃতিতে ব্যক্তিগত জীবনকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি কতটা বজায় থাকবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন