বার্লিনে মার্জের সঙ্গে জেলেনস্কির জরুরি বৈঠক, বাড়ছে সামরিক সহায়তা?

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্চ-এর সঙ্গে বার্লিনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছেন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনের জন্য আরও সামরিক সহায়তার ব্যবস্থা করা।

রাশিয়ার বোমা হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউক্রেন বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। খবর অনুযায়ী, বুধবারের এই বৈঠকে রাশিয়াকে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার বিষয়েও আলোচনা হবে।

জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চ্যান্সেলর মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ফেডারেল চ্যান্সেলরিতে জেলেনস্কিকে সামরিক সম্মাননা জানাবেন। এর আগে, তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়নি।

জার্মান চ্যান্সেলর মার্চ মঙ্গলবার মন্তব্য করেন যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বর্তমানে যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তিতে আগ্রহী নন। তিনি আরও বলেন, “এর ফলস্বরূপ, ইউক্রেনকে অবশ্যই নিজেদের রক্ষা করতে হবে এবং আমরা তাদের সেই কাজে আরও বেশি সহায়তা করতে প্রস্তুত।

মার্চ আরও উল্লেখ করেন, এই যুদ্ধ কেবল ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখন্ডতার বিষয় নয়, বরং ১৯৯০ সালের পর রাশিয়াকে সাথে নিয়ে যে রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি হয়েছিল, সেটিও এখন প্রশ্নের মুখে।

অন্যদিকে, সম্প্রতি ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। এর ফলে ইউক্রেন এখন রাশিয়ার সামরিক অবস্থানেও হামলা চালাতে পারবে।

যদিও জার্মানির পক্ষ থেকে কবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

ক্রেমলিন এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে বর্ণনা করেছে। তাদের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে, তবে তা রাজনৈতিক সমাধানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।

যুদ্ধ এখনো প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রন্ট লাইনে চলছে। উভয় পক্ষই ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। রবিবার রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাদের বৃহত্তম ড্রোন হামলা চালায়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত তারা ১৩টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়া ২৯৬টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন জানিয়েছেন, রাজধানী অভিমুখে আসা ৩৩টি ড্রোনকে তারা ধ্বংস করেছেন।

মস্কো অঞ্চলের গভর্নর আন্দ্রেই ভোরোবিওভ জানিয়েছেন, ৪২টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। ড্রোন থেকে পড়া ধ্বংসাবশেষের কারণে ট্রয়েটস্কোয়ে গ্রামে তিনটি আবাসিক ভবনের ক্ষতি হয়েছে, তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

এই হামলার কারণে মস্কোর বিমানবন্দরগুলোতে শত শত ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল করা হয়েছে।

বুধবার ভোরে ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ান বাহিনী পাঁচটি ‘ইস্কান্দার’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, একটি গাইডেড এয়ার-লঞ্চড ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৮৮টি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো ৩৪টি ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং ৩৭টি ড্রোনকে অকার্যকর করে দিয়েছে।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি ‘ইউক্রজালিজনিৎসিয়া’ জানিয়েছে, খারকিভ, দোনেৎস্ক এবং সুমি অঞ্চলের রেল অবকাঠামো ও সরঞ্জামের ওপরও হামলা হয়েছে। খারকিভ অঞ্চলে, একটি ড্রোন রেললাইনে বিধ্বস্ত হওয়ায় সাময়িকভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

দোনেৎস্ক অঞ্চলের স্লোভিয়ানস্কে, স্টেশনের ভবনের জানালা ভেঙে গেছে এবং একটি ট্রেনের বগিতে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *