শেয়ার বাজারে ভিন্ন চিত্র: একদিকে ওয়াল স্ট্রিটের সতর্কবার্তা, অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ‘ডিপ কিনার’ প্রবণতা।
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন শেয়ার বাজারে এক আকর্ষণীয় প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একদিকে যখন শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীরা, যাদের মধ্যে ব্যাংক অফ আমেরিকা’র মত বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা রয়েছেন, বাজারের অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করছেন না।
তারা যেন ‘ডিপ কিনার’ নীতিতে ভরসা রেখে কম দামে শেয়ার কিনছেন, যা আপাতত লাভের মুখ দেখাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভিন্নমত তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে উদ্বেগের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এখন তাদের বিনিয়োগের কৌশল পরিবর্তন করছেন। এপ্রিল মাসের একটি জরিপে দেখা গেছে, রেকর্ড সংখ্যক বৈশ্বিক ফান্ড ম্যানেজাররা তাদের মার্কিন শেয়ারের পরিমাণ কমাতে চাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক শ্রেষ্ঠত্ব এখন তার শীর্ষে পৌঁছে গেছে।
অন্যদিকে, খুচরা বিনিয়োগকারীরা, অর্থাৎ যারা নিজেদের অর্থ বিনিয়োগ করেন, তারা বাজারে সক্রিয় রয়েছেন। তারা ওয়াল স্ট্রিটের উদ্বেগকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং নিয়মিতভাবে শেয়ার কিনছেন।
এপ্রিলের শুরুতে যখন বাজার কিছুটা পড়ে গিয়েছিল, তখন তারা এটিকে শেয়ার কেনার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন।
এই ‘ডিপ কিনার’ কৌশল সম্ভবত কাজ করেছে। শুধুমাত্র ১৯ মে তারিখে খুচরা বিনিয়োগকারীরা ৫.১ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার কিনেছেন, যা ২০১৫ সাল থেকে তথ্য সংগ্রহের শুরু হওয়ার পর থেকে একদিনে খুচরা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এই ক্রয় বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে সহায়তা করেছে। এছাড়া, ৮ এপ্রিল থেকে ১৪ মের মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার কিনেছেন। এই সময়ে বাজারকে চাঙ্গা রাখতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মার্কিন অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে এখনো সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে, বছরের শেষ দিকে অর্থনীতির স্বাস্থ্য নিয়ে আরও কিছু উদ্বেগের সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেপি মরগান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যামি ডিমনের মতে, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ‘অস্বাভাবিক রকমের আত্মতুষ্টি’ দেখাচ্ছে। তিনি মনে করেন, শুল্কের ঝুঁকি এখনো বিদ্যমান এবং এর ফলস্বরূপ মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, মরগান স্ট্যানলির প্রধান বৈশ্বিক অর্থনীতিবিদ সেথ কার্পেন্টার সতর্ক করে বলেছেন, শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য একটি ‘বিশাল ধাক্কা’ হিসেবে কাজ করতে পারে। তার মতে, যদিও অনিশ্চয়তা কমছে বলে মনে হচ্ছে, শুল্ক এখনো বহাল আছে এবং তা আগের তুলনায় অনেক বেশি থাকতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, খুচরা বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রশ্ন হল, তারা কি ‘ডিপ কিনার’ কৌশল অব্যাহত রাখবেন, নাকি ইউরোপের বাজারের দিকে ঝুঁকবেন?
শেয়ার বাজারের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির যেকোনো পরিবর্তন আমাদের দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে। মার্কিন অর্থনীতির মন্দা দেখা দিলে, তা বাংলাদেশের রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, বিনিয়োগকারীদের বাজারের এই প্রবণতাগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ার বাজার একটি জটিল বিষয়। এখানে বিনিয়োগের আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি। এই মুহূর্তে, বাজারের অস্থিরতা সত্ত্বেও, যারা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, তাদের জন্য সুযোগ রয়েছে।
তবে, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তথ্য সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা।