যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ভিসা বন্ধ: শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন স্টুডেন্ট ভিসা স্থগিত: বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের উপর এর প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভিসা ইন্টারভিউয়ের সময়সূচী স্থগিত করছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যেতে ইচ্ছুক, তাদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

খবর অনুযায়ী, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছে, যার কারণে এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানা যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ছাত্র ভিসাপ্রার্থীদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করতে চায়। এর অংশ হিসেবে, আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইলগুলো আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হবে। ভিসা প্রক্রিয়াকরণে স্বচ্ছতা আনতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে: এফ-১ ভিসা (ছাত্র ভিসা), জে-১ ভিসা (এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ভিসা), এবং এম-১ ভিসা (প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের জন্য ভিসা)। এই সিদ্ধান্তের ফলে, এই তিনটি ক্যাটাগরির ভিসার আবেদনকারীদের নতুন ইন্টারভিউয়ের সময়সূচী আপাতত বন্ধ থাকবে।

তবে, যাদের ইন্টারভিউয়ের তারিখ আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল, তাদের ভিসার ওপর এই সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব পড়বে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১১ লাখ ৩০ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ৬.৬ শতাংশ বেশি। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আসে এশিয়া থেকে।

ভারত থেকে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩ লক্ষ ৩১ হাজার। এরপর চীন থেকে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার।

এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা স্থগিতাদেশ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। প্রতি বছর বহু সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়।

তাদের অনেকেরই ভিসা ইন্টারভিউ এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া এখন স্থগিত হয়ে যাবে।

তবে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই স্থগিতাদেশটি কতদিন চলবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। যারা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন এবং ভিসার মেয়াদ বাড়াতে অথবা নবায়ন করতে চান, তাদের ক্ষেত্রেও এই সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের কারণে, বিশেষ করে যারা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন, তাদের ভিসা প্রক্রিয়াকরণে বিলম্ব হতে পারে। সাধারণত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যে তাদের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করে।

এরপর, শিক্ষার্থীরা ভিসা আবেদন করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ভিসা পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই, ভিসা স্থগিতাদেশের কারণে অনেক শিক্ষার্থীর ভর্তি প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাখাতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমন কমে যেতে পারে, যা দেশটির অর্থনীতি এবং শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *