রহস্যে মোড়া! বিজ্ঞানীরা নতুন মহাজাগতিক বস্তুর সন্ধান পেলেন, আলো ছড়াচ্ছে!

মহাকাশে এক নতুন রহস্যের সন্ধান! বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন এমন এক জ্যোতিষ্ক যা থেকে নির্গত হচ্ছে আলোকরশ্মি এবং এক্স-রশ্মির ঝলকানি। এই আবিষ্কার মহাকাশ বিজ্ঞানীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

বিজ্ঞানীরা ‘অ্যাসকাপ জে১৮৩২-০৯১১’ (ASKAP J1832-0911) নামে পরিচিত একটি জ্যোতিষ্কের সন্ধান পেয়েছেন, যা আমাদের সৌরজগতের গ্যালাক্সিতে, পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই জ্যোতিষ্ক থেকে প্রতি ৪৪ মিনিট পর পর প্রায় ২ মিনিটের জন্য আলোকরশ্মি এবং এক্স-রশ্মি নির্গত হতে দেখা যায়।

এই ঘটনাটি অত্যন্ত বিরল এবং এর আগে এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোনো বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নতুন আবিষ্কারের ফলে মহাকাশের অনেক অজানা রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে। সাধারণত, এক্স-রশ্মি অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং শক্তিশালী পরিবেশ থেকে নির্গত হয়।

এই ধরনের রশ্মির উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে জ্যোতিষ্কের মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে। গবেষকরা এখনো এই রহস্যময় বস্তুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। তারা জানতে চান, কেন এটি এত উজ্জ্বল এবং কিভাবে এই আলো ও রশ্মি নির্গত হচ্ছে।

এই ধরনের বস্তু আগে কখনো দেখা যায়নি। এমনকি প্রচলিত তত্ত্বগুলোও এর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারে না। এই আবিষ্কার হয়তো নতুন ধরনের পদার্থবিদ্যা অথবা নক্ষত্রের বিবর্তনের নতুন ধারণার ইঙ্গিত দেয়।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইনস্টিটিউট অফ রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির সহযোগী অধ্যাপক ড. অ্যান্ডি ওয়াং

এই গবেষণায় অস্ট্রেলিয়ার স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে পাথফাইন্ডার (ASKAP) এবং নাসার চন্দ্রা এক্স-রে অবজারভেটরির (Chandra X-ray Observatory) মত শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতের বিজ্ঞানীরাও এই গবেষণায় সহযোগিতা করেছেন।

কসমিক রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি কোর (CRACO) নামক একটি যন্ত্র, যা দ্রুত গতির রেডিও তরঙ্গ সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়, এই আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ড. ওয়াং আরও জানান, তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন এটি হয়তো একটি ম্যাগনেটার (magnetar), যা অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রযুক্ত একটি নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষ, অথবা শ্বেত বামন নক্ষত্রের (white dwarf) কাছাকাছি থাকা কোনো বস্তু।

কিন্তু এই জ্যোতিষ্কের আলো ও রশ্মির উজ্জ্বলতা এবং তাদের পরিবর্তনশীল প্রকৃতি প্রচলিত ধারণার সঙ্গে মেলে না।

এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা এখন দীর্ঘ-মেয়াদী রেডিও তরঙ্গ নির্গত করা বস্তুগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তা করতে শুরু করেছেন। ভবিষ্যতে, এক্স-রশ্মি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই বস্তুর তাপমাত্রা এবং আকার সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যেতে পারে, যা এর উৎস সম্পর্কে ধারণা দিতে সাহায্য করবে।

এই আবিষ্কার একটি বিশাল সমুদ্র থেকে একটি ছোট মাছ খুঁজে পাওয়ার মত, এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই ধরনের আরও অনেক রহস্যময় বস্তুর সন্ধান পাওয়া যাবে, যা মহাবিশ্বের আরও অনেক অজানা দিক উন্মোচন করবে।

এই গবেষণা *নেচার* জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *